এই আলাদিন সেই আলাদিন না কিন্তু। তবে সেই আলাদিন হল এই আলাদিনের দাদুর দাদুর দাদু। সেই আলাদিনের ছিল আশ্চর্য প্রদীপ। আর এর গল্পটা শার্ট নিয়ে। সেই আলাদিনও ছিল গরিব, বাপ-হারা, মায়ের একমাত্র ছেলে। এই আলাদিনও গরিব।
তোমরা ভাবছ, সেই আলাদিন তো শেষমেশ বাদশা হয়েছিল। তাহলে তার নাতির নাতির নাতি গরিব হতে যাবে কেন? আসলে বাদশার ছেলেরা ভীষণ কুঁড়ে হয় আর আলসেমি করে তারা নিজেদের সব টাকাকড়ি জলে দেয়, একথা নিশ্চয় তোমরা জানো। কয়েক পুরুষের মধ্যে বাদশার বাদশাগিরি খতম। সব টাকাপয়সা তো পায়রা উড়িয়ে আর বাজি পুড়িয়ে খতম করে দিয়েছিল আলাদিনের ছেলে, তস্য ছেলে, তস্য ছেলে আল্লারাখা আর আল্লাবন্দিশরা।
তাই এই আলাদিন আমাদের এখনকার যুগের গরিব ছেলে। বাবার পেনশনের টাকায় কোনও মতে সংসার চলে। মায়ের সঙ্গে দিল্লির এক মাঝারি বস্তিতে থাকে। বাড়িতে একটা খাট, একটা পড়ার টেবিল আর একটা পুরনো সাদাকালো টিভি আছে। পাশের একচিলতে বারান্দায় মা একটা পুরনো স্টোভ জ্বেলে রুটি পাকায়। ভিন্ডির সবজি আর রুটি ছাড়া ওদের দুজনের কপালে বিশেষ কিছু জোটে না। না দুধ ঘি, না তেলমশলা। তো মায়ের খুব ইচ্ছে আলাদিন পড়াশুনো শিখে বড় হয়। কিন্তু আলাদিন এখনও লেখাপড়ায় মন দেয় না। কোনও রকমে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে পাড়ায় পাড়ায় আড্ডা দিয়ে বেড়ায়।
বাদশাহি আমলের কয়েকটা সোনার মোহর মা শ্বশুরকুলের খাজাঞ্চিখানার শেষ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে জমিয়ে রেখেছিল। অসময়ে যদি কাজে লাগে এই ভেবে। হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করার পর আলাদিনকে জোর করে মা সেই টাকার একটা ভাঙিয়ে একটা ভালো ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে দিল। বলল, “এখানে একটু স্পোকেন ইংলিশ আর কম্পিউটারের ট্রেনিং নিয়ে নে বাবা, বলছে তো সহজে চাকরি পাবি।”
তো ইংরিজি বলতে গিয়ে আলাদিন দেখে আরিব্বাস, এক সাহেব এসেছে পড়াতে। সেই সাহেবের ইংরিজি শুনলে কিচ্ছু বোঝা যায় না। কিন্তু ওইরকম ইংরিজি শুনলে বুঝতেও হবে, বলতেও হবে, তাহলেই একমাত্র কানে একটা করে হেডফোন লাগিয়ে কমপিউটারের সামনে বসে বসে কথা বলার চাকরি পাবে আলাদিন। সেখানে সারাদিন সারারাত জেগে ওরা নানান মার্কিন সাহেবের সঙ্গে কথা বলবে ইংরিজিতে। যে কাজের যে নিয়ম, আলাদিন লিখতে শুরু করল।
রোজ সকালে সাহেব এসে ওদের ট্রেনিং দেয়। বলে, “বলো, ড-ড-ড-ড-ড।” ক্লাসশুদ্ধু সমস্বরে বলে, “ড-ড-ড-ড-ড।” সাহেব বলে, “ট-ট-ট-ট-ট, ঠ-ঠ-ঠ-ঠ-ঠ।” মার্কিন মুলুকে সব কথার সঙ্গে একটা করে ট আর ঠ থাকে তো, তাই।
সাহেব বলে, “বলো, ঢ্যা-ঢ্যা-ঢ্যা-ঢ্যা-ঢ্যা।” ওরা বলে, “ঢ্যা-ঢ্যা-ঢ্যা-ঢ্যা-ঢ্যা।” সাহেব বলে, “অ্যা-অ্যা-অ্যা-অ্যা-অ্যা।” ওরা বলে, “অ্যা-অ্যা-অ্যা-অ্যা-অ্যা।” তারপর বলে, “অ্যালাবাস্টার অ্যালিগেটর অ্যামেরিকা।” ওদের মুখে এখন আর কোনও জড়তা নেই। সাহের ঠিক যে রকম করে বলতে বলে, ওরাও পারে — স্কেডিউল, স্কলার। আগে তো আলাদিন ইস্কুল বলত, এখন স্কুল বলে।
এমনি করে আলাদিনের বুলি একেবারে চোস্ত হয়ে উঠল কদিনের মধ্যেই। আলাদিনের নতুন নাম হল অ্যাল ডিনো। আর একটা মস্ত বড় অফিসে ওর চাকরি হয়ে গেল। মানে হয়ে যেত, যদি না একটা মহা মুশকিল ঘটত।
যেদিন নতুন চাকরির জন্য ওর পড়া নেবে, তার আগের দিন রাতে ওর সাহেব মাস্টার ক্লাসে এসে বলল, “তোমরা কাল পড়া দিতে যেও ডাক-ঘরে।” ডাক-ঘর, মানে যেখানে ওদের চাকরি হবে, সেটার ইংরিজি নাম তো কল-সেন্টার, তাহলে দিশি নাম ডাক-ঘরই তো হবে। মাস্টার বলল, “কাল যখন তোমাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে, তখন কিন্তু কেউ আজকের মতো ময়লা, রঙিন, ডোরাকাটা টি-শার্ট পরে এসো না। তোমরা কাল সব্বাই ধবধবে সাদা ফুলশার্ট পরে যাবে। শার্টটা যদি নতুন আর পরিষ্কার না হয়, তোমাদের সব নম্বর কাটা যাবে কিন্তু, আর চাকরিটাও তোমরা পাবে না।”
এই শুনে আলাদিনের তো প্রায় অক্কা পাবার জোগাড়। এখন নতুন শার্ট সে পাবে কোথায়? মাকে গিয়ে কী বলবে? এমনিতেই তো তাকে ট্রেনিং দিতে গিয়ে মায়ের জমিয়ে রাখা একটা মোহর গিয়েছে। এবার কি তাহলে আরেকটা মোহরও যাবে?
মাথা নীচু করে চিন্তাভাবনায় মনের দুঃখে হাঁটছিল রাস্তা দিয়ে আলাদিন। বাড়ি ফিরে মাকে টাকার কথা বলতে হবে ভেবেই বুক শুকিয়ে আসছিল তার। একেবারেই অন্যমনস্ক হয়ে কখন যেন একটা বাজারের মধ্যে ঢুকে পড়েছে আলাদিন, হাঁটতে হাঁটতে দেখল চারদিকে ফুটপাতের উপরে হরেকরকম পসার সাজিয়ে বসেছে হকাররা। হঠাৎ চমকে উঠে আলাদিন দেখল, রাস্তার ধারে একটা বড় প্যাকিং বাক্সে অনেক শার্ট সাজিয়ে একটা ছেলে বিক্রি করছে, আর চেঁচাচ্ছে, “পঁয়তিস রুপিয়া, পঁয়তিস রুপিয়া।”
যেন ঘুম থেকে ধড়মড় করে জেগে উঠল আলাদিন। পকেট হাতড়ে দেখল, ওর ঝুরঝুরে হয়ে আসা মানিব্যাগে ঠিক পঁয়ত্রিশ টাকা আছে। এ তো ভারী আশ্চর্য ঘটনা। তার মানে ওই শার্টগুলোর মধ্যে একটাই তার কপালে ঝুলছে! আর বিন্দুমাত্র দেরি না করে আলাদিন বেছে বেছে কিনে নিল একটা সাদা ধবধবে শার্ট। লোকে বলে এগুলো নাকি চুরি করা শার্ট। অনেকে বলে, সাহেবরা গরিব-দুঃখীদের জন্য এইসব শার্ট দান করে জাহাজে করে পাঠায়, কিন্তু দুষ্টু লোকেরা সেগুলো সব বিক্রি করে দেয়। তা আলাদিন ভাবল, আমিও তো গরিবের ছেলে, আমার জন্যই তো ওইসব জামা। দোষের কী আছে!
তো, এমনি করে, আলাদিনের ভাগ্যে একটা সাদা ফুলহাতা শার্ট তো জুটল। পরদিন সকালবেলা উঠে দাঁত মেজে, রুটি আর সবজি খেয়ে আলাদিন চলল চাকরির পরীক্ষা দিতে। আজ কুঁদরির সবজি ছিল, ভিন্ডির দাম বড্ড বেশি। আশ্চর্য ব্যাপার, সেদিন বাসটাও বেশ ফাঁকা ফাঁকা ছিল। আর, বলা নেই, কওয়া নেই, সেদিনই আবার সকালের খবরের কাগজটা বাসে উলটোদিকে বসা একজন যাত্রীর হাত থেকে উড়ে এসে হাওয়ায় পতপত করে সোজা আলাদিনের মুখের উপরে এসে পড়ল আর বেমালুম সেঁটে গেল। “আরে আরে কী হল কী হল” — সবাই চেঁচিয়ে উঠল। কোনওমতে মুখ থেকে টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে যখন আলাদিন ভদ্রলোককে কাগজটা ফিরিয়ে দিচ্ছে, দেখল বড় বড় করে হেডলাইন লেখা রয়েছে, বারাক হুসেন ওবানা হলেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সঙ্গে একটা ছবিও রয়েছে ওবামা সাহেবের। দেখতে যদিও বেশ মানুষ মানুষ, একদম সাহেব সাহেব না।
পরীক্ষায় পড়বি তো পড়, আবার এক সাহেবের হাতেই পড়তে হল আলাদিনকে। সে সাহেব প্রশ্ন করার আগেই আড়চোখে আলাদিনের শার্টটা দেখে নিলেন। মনে মনে বেশ সন্তুষ্ট হয়েছেন। তারপর চশমার ফাঁক দিয়ে ওর দুই ভুরুর মাঝখানে তাকিয়ে বললেন, “খ্যান য়ু রিড দিস প্লিইইজ়?” বলে ওর দিকে একটা ছাপানো পৃষ্ঠা এগিয়ে দিলেন। সেটাতে একটা গল্প রয়েছে। খরগোস আর কচ্ছপের গল্প। ভালো করে রিডিং পড়ার পর, কাগজটা ফেরত নিয়ে সাহেব বললেন, “খ্যান য়ু ঠেল মি দ্য জিস্ট অফ দ্য স্ঠোরি?”
জিস্ট কথাটা জন্মে শোনেনি আলাদিন। কিন্তু আজ তো তার ভালো দিন, কে যেন বিড়বিড় করে তার মাথার মধ্যে বলে উঠল, “কাহানি কা সারাংশ।” অমনি নিজের বিদ্যের দৌড় যতটুকু, ততটুকু ইংরিজি ঢেলে দিয়ে আলাদিন বলে দিল, কখনও হার মানে না যারা, তারাই জেতে।
সাহেব এই উত্তর শুনে খুশিই হয়েছেন বলে তার মনে হল। তারপর তিনি বললেন, “ঢু য়ু নো দ্য নেম অফ আওয়ার নিউ প্রেসিডেন্ঠ?”
আওয়ার মানে আমাদের। আমাদের মানে কি আমাদের দেশ, না সাহেবদের দেশ? বুঝতে পারল না আলাদিন। আমাদের দেশ হলে তো উত্তরটা হবে প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রায় বলেই ফেলতে যাচ্ছিল। কিন্তু এবারেও তার মাথার মধ্যে কে যেন বিড়বিড় করে বলল, বুঝতে পারছ না সাহেব মার্কিন, ওটার উত্তর তো তুমি জানো!
ফট করে আলাদিন বলে বসল, “বারাক হুসেন ওবামা।” ওর চোখের উপর তখনও সকালবেলায় দেখা ছবিটা জ্বলজ্বল করছে।
আর কোনও প্রশ্ন করল না সাহেব। মিষ্টি হেসে ওর পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল, “য়ু গঠ ইঠ!”
চাকরিটা হয়ে গেল আলাদিনের। বাড়ি ফিরে মাকে আনন্দের খবরটা দিয়ে বলল, “জানো মা, আমার কেমন মনে হচ্ছে এই শার্টটা খুব পয়া। এটাকে বেশি ধোয়াধুয়ি কোরো না কিন্তু। যদি পয় চলে যায়!”
সাতদিন পরপর ওই শার্টটা পরেই অফিসে গেল আলাদিন। সাতদিনেই ওর কাজে খুব খুশি হল সাহেবের দল। ওর গলা রেকর্ড করে রাখা হয়, সেই গলা শুনে সাহেব বিচার করে, ওর কাজ ও ভালো করে করছে কিনা, সবার সঙ্গে মাপমতো হেসে, ভদ্রভাবে কথার জবাব দিচ্ছে কিনা। সবেতেই তো ফুলমার্কস পেতে লাগল আলাদিন। মনটা আনন্দে ভরে গেল।
তবে কিনা, কয়েকদিন যেতেই ওর পাশে বসা ছেলেমেয়েরা সাহেবের কাছে নালিশ করে এল। একটাই শার্ট পরে রোজ আসছে আলাদিন, আর কী বদখৎ গন্ধ ওর গায়ে। আমরা কেউ ওর পাশে বসব না। ভিন্ডিভাজা, দিল্লির বাসের শুকনো ধুলো আর গরমের ঘাম মিলেমিশে খিচুড়িপাকানো ওই গন্ধটা পেলেই সবার রাগ হয়, কান কটকট করে, কাজে ভুল হতে থাকে। আসলে এখন আলাদিনের কাজ সাহেবদের বেশি বেশি করে পছন্দ হতে শুরু করেছে কিনা, তাই হিংসেতে তো তার আশেপাশে অন্যদের এমনিতেই কান কটকট করছিল।
সাহেব ওকে ডেকে পাঠাল, “বলল, এবার হয় জামাটা পালটাও, আর নয়তো কাচতে দাও। নয়তো আমার মতো পারফিউম ইউজ় করো।”
আলাদিন কী আর করে, দামি পারফিউম কোথায় আর পাবে, রবিবারেই জামাটা কাচতে দেবে মনস্থ করল। আর সেই রবিবারেই হল এক বিচ্ছিরি ব্যাপার।
জামাটা মা ভিজিয়ে দিল, কিন্তু ভুল করে সঙ্গে নিজের একটা সালোয়ার কামিজও ভিজিয়ে দিয়েছিল। সেটা থেকে গলগল করে বেরিয়েছে লাল রঙ। কাচতে বসে মায়ের চক্ষুস্থির। আলাদিনের নতুন সাদা শার্ট একেবারে হোলি খেলার জামার মতো লাল লাল ছোপে ভরে গিয়েছে।
মায়ের কাণ্ড দেখে তো রাগে প্রায় মাথার চুল ছেঁড়ার অবস্থা আলাদিনের। “কী যে করো মা তুমি! এখন আমার চাকরিটাও যাবে, আর এমন পয়া জামাটারও বারোটা বেজে গেল। কী করি! সরো দেখি, তুমি সরো। আমাকে বুরুশটা দাও।”
তারপরে কী হল, সে নিশ্চয়ই তোমাদের আর বলে দিতে হবে না। বাথরুমের মেঝেতে বসে আলাদিন সর্বশক্তি দিয়ে শার্টের উপরের ছোপগুলো তুলতে চেষ্টা করে যেই না বুরুশ দিয়ে জোরে ঘষেছে, অমনি কালো ধোঁয়া বেরোতে থাকল শার্টটা থেকে। আর সেই ধোঁয়ায় ভরে গেল ঘর। আঁতকে উঠে আলাদিন ভাবল, এ আবার কী! হঠাৎ সেই ধোঁয়াটা বলে উঠল, “জাঁহাপনা আদেশ করুন, কী করতে হবে!”
আলাদিন তো আর বোকা নয়, এ যুগের ছেলে। তাছাড়া তার দাদুর দাদু, তস্য দাদুর কাহিনি তো আর তার অজানা না। সে চটপট বলে উঠল, “তুমি কে হে, চিরাগের জ্বিন? জ্বিন বলল, “এঁজ্ঞে না, আমি শার্টের জ্বিন।”
আলাদিন নিজেকে চটপট শুধরে নিয়ে বলল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ ওই হল আর কী! তা বাবা শার্টের জ্বিন, তুমি কোথা থেকে এলে বলো তো? আমি চিরাগের জ্বিন শুনেছি, আংটির জ্বিন শুনেছি, শার্টের জ্বিন তো জন্মে শুনিনি বাপু। এমনকী জিনসের শার্টও শুনেছি, তাহলেও একটা কথা ছিল।”
জ্বিন, মেঘের মতো থমথমে চেহারার ভিতর থেকে মাইকের মতো গমগমে গলায় বলল, “আমার মালিকের আসলে চিরাগের ব্যবসা ছিল, কিন্তু এখন তো সবাই ইলেকটিরির আলো জ্বালে, চিরাগের বাজারটাই চলে গেল। তাই আমার মালিক শার্টের ব্যবসা শুরু করলেন। আমরাও তল্পিতল্পা গুটিয়ে বেঘর হয়ে একেকজন একেকটা শার্টের মধ্যে সেঁধোলাম। যুগ পালটে যাচ্ছে হুজুর, আমাদেরও তো তার সঙ্গে সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে!”
বুঝতে পারল আলাদিন। আনন্দে ওর মুখ দিয়ে অ্যামেরিকান অ্যাকসেন্টে বেরিয়ে এল, “ঠ্যাংকু জ্বিন, ঠ্যাংকু! ভাগ্যে তুমি এই শার্টে ঢুকেছিলে, তাই এ যাত্রাটা আমার চাকরিটা হল। কিন্তু এখন কী করি বলো তো, এই শার্টটা তো আর অফিসে পরে যাওয়া যাবে না।”
জ্বিন বলল, “আমি থাকতে আপনার ভাবনা কী হুজুর? আপনি অর্ডার করুন, কটা শার্ট লাগবে?”
আলাদিন বলল, “আপাতত গোটা তিনেক সাদা শার্ট হলেই আমার চলবে, ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পরব। তারপর এই ধরো দুটো প্যান্ট আর এক সেট গেঞ্জি, আর সাদা মোজা দিতে ভুলো না। এই চপ্পলটাও এবার পালটে একজোড়া জুতো দিও। আর শোনো, তোমার কাছে জিনসের প্যান্ট, জিনসের জ্যাকেট হবে তো? দিল্লিতে তো আবার শীত আসছে। ওগুলো তো লাগবে।”
জ্বিন গমগম করে হেসে বলল, “হেঁ হেঁ হুজুর, আমি জ্বিন হয়ে জিনসের প্যান্ট জামা সাপ্লাই করতে পারব না? তাও কি হয়?”
জ্বিনের হাসির শব্দ শুনে আলাদিনের মা রান্নাঘরের চিলতে বারান্দা থেকে বলে উঠল, “এই অসময়ে আবার আকাশে মেঘ করল নাকি রে! মেঘ গুড় গুড় করছে কেন!”
সেদিন দুপুরে আলাদিন তার মাকে বলল, “মা, আজ আর ভিন্ডির সবজি রুটি খাব না। আজ পোলাও আর চিকেন তন্দুরি খাব।”
মা তো অবাক। “সে কী রে, তোর অফিস থেকে মাইনে দিয়েছে নাকি?”
“হ্যাঁ মা, দিয়েছে না দিয়েছে! ওই দেখে এসো খাটের উপর কত জামাকাপড়।”
বছরদুয়েক পরে একদিন আলাদিন মাকে বলল, “মা, আজ আমার বড়সাহেব আসছে। তোমার তন্দুরি রেস্টুরেন্টের থেকে সাহেব অর্ডার দিয়েছে বিরিয়ানি আর চিকেন তন্দুরি। কুড়ি প্লেটপ্যাক করে দিও। এই নাও অ্যাডভান্স।”
মায়ের চোখে খুশির ঝিলিক। চটপট আলমারি খুলে শার্টটা বের করে বাথরুমে চলে গেলেন বুরুশ হাতে। যাবার পথে মুখ ঘুরিয়ে বললেন, “ওরে আলাদিন, এবার একটা রাজকন্যের ব্যবস্থা কর। তোর ডাক-ঘরে কোনও ভালো রাজকন্যে-টন্যে আসে না চাকরি করতে? বুরুশ ঘষতে ঘষতে আমার যে হাতের নড়া ছিঁড়ে গেল বাবা!”
ছবি – সুমিত রায়
গল্পটি টগবগ উৎসব সংখ্যা ১৪২৩-এ প্রকাশিত
Leave a Reply