জালিয়ানওয়ালা বাগ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। ১৯১৯, ইংরেজদের অধীনে সারা ভারতবর্ষ অশান্ত। দেশের শাসনক্ষমতার বেশ কিছুটা দায়িত্ব ভারতবাসীর হাতে তুলে দেওয়া হবে এমন আশায় বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয়রা ব্রিটিশদের সাহায্য করেছিল। দশ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় সৈন্য ইংরেজদের হয়ে লড়াই করতে গিয়েছিল ইউরোপে। তার মধ্যে অন্তত ৭৪,০০০ সৈন্য প্রাণও দিয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হতে ইংরেজরা স্বমূর্তি ধারণ করে। যুদ্ধের খরচ মেটাতে ভারতবাসীর ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপানো হয়। যে কোনও প্রতিবাদ প্রতিরোধ দমন করতে আনা হয় নতুন আইন। রাওলাট অ্যাক্ট নামের সেই আইনে বিনা সাক্ষ্য প্রমাণে কেবল সন্দেহের বশেই যে কোনও ভারতীয়কে বন্দি করা যেত। যে কোনও স্বাধীনচেতা মানুষের কাছে এমন আইন যথেষ্ট অপমানের। তাই সারা ভারত রাগে ফুঁসছিল।

দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গেই পাঞ্জাবেও অসন্তোষের আগুন ধিকিধিকি জ্বলতে শুরু করেছিল। সেখানে মাত্র কয়েক বছর আগেই ইংরেজরা কড়া হাতে গদর বিপ্লব দমন করেছে। তার ওপর যুদ্ধের পর চাল, গম, বাজরা, নুনের মতো সাধারণ খাবারের দামও দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে গিয়েছিল। রাওলাট আইন পাস হবার পরেই মহাত্মা গান্ধি সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ডাক দেন। কোনও রকম হিংসা বা অস্ত্রের ব্যবহার না করে সত্যের পথে অবিচল থেকে অহিংস সেই আন্দোলন ভারতবাসীর কাছে নতুন। পাঞ্জাবেও গান্ধিজির বহু অনুগামী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অমৃতসরের দুই আইনজীবী ডক্টর সত্যনারায়ণ এবং ডক্টর সইফুদ্দিন কিচলু মানুষকে বোঝাতে শুরু করলেন সত্যাগ্রহের মূলমন্ত্র। সম্পূর্ণ অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে ইংরেজদের বাধ্য করতে হবে ভারতবাসীর কথা শুনতে। ১৯১৯-এর ২৯ মার্চ তাঁরা সাধারণ মানুষকে নিয়ে সভা করলেন।

তার পরদিন ৩০ মার্চ পালিত হল হরতাল। সমস্ত দোকান বাজার বন্ধ করে অমৃতসরের মানুষ বুঝিয়ে দিলেন, তাঁরা ইংরেজদের শাসন মুখ বুজে মেনে নেবেন না। দেশের শাসনভারে অধিকার থাকতে হবে ভারতীয়দেরও। ডক্টর কিচলুর নেতৃত্বে জালিয়ানওয়ালা বাগে প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষের একটা সভা হল। ইংরেজদের জন্যে সবথেকে ভয়ের ব্যাপার, হিন্দু-মুসলমান-শিখ একত্রিত হয়ে প্রতিবাদে অংশ নিতে শুরু করেছে। এর আগে ইংরেজরা নানা বাহানায় হিন্দু আর মুসলমানদের একে অপরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিয়ে দাঙ্গা ঘটিয়েছে। কিন্তু অমৃতসরে নতুন কিছু ঘটতে শুরু করেছিল। ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান উঠছে— ‘মহাত্মা গান্ধির জয়।’ ‘হিন্দু-মুসলমান জিন্দাবাদ।’

মহাত্মা গান্ধী, ১৯১৯-এ তোলা ছবি

মহাত্মা গান্ধী, ১৯১৯-এ তোলা ছবি

ডক্টর কিচলুকে নিয়ে প্রকাশিত ডাকটিকটি

ডক্টর কিচলুর স্মরণে প্রকাশিত ডাকটিকটি

 

ঠিক হল, পরের সপ্তায় আবার হবে হরতাল। অমৃতসরের ডেপুটি কমিশনার মাইলস্‌ আরভিং প্রাণপণ চেষ্টা করলেন ধর্মঘট ঠেকাতে। সেই চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে দেখে আর কোনও পথ না পেয়ে ডক্টর সত্যনারায়ণ আর ডক্টর কিচলুর প্রকাশ্যে বক্তৃতা দেওয়া নিষিদ্ধ করা হল। তাতে অবশ্য তাঁদের কাজে বিশেষ বাধা পড়ল না। তাঁরা দরজায় দরজায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলেন। ৬ এপ্রিল আবার পালিত হল হরতাল। জালিয়ানওয়ালা বাগে এবার জড়ো হলেন প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ। সিদ্ধান্ত নেওয়া হল ইংরেজ শাসকদের রাওলাট আইন ফিরিয়ে নিতে বলা হবে। আর সেই সঙ্গে পাঞ্জাবের লেফটেনান্ট গভর্নর মাইকেল ও’ডয়ারকে অনুরোধ করা হবে ডক্টর সত্যনারায়ণ এবং ডক্টর কিচলুর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্যে সত্যাগ্রহ কমিটি তৈরি করা হল।

৭ এপ্রিল ভারতবাসীকে সত্যাগ্রহ সম্পর্কে আরও সচেতন করে তুলতে মহাত্মা গান্ধি ‘সত্যাগ্রহী’ নামে একটি খবরের কাগজ প্রকাশ করলেন। তাতে মূলত সত্যাগ্রহর অর্থ এবং সেই সম্পর্কে আরও জানতে কী কী বই পড়া উচিত— এই সব তথ্য ছিল। অমৃতসরে সত্যাগ্রহের প্রতি সাধারণ মানুষ উৎসাহ ক্রমশ বেড়ে চলেছিল। সেটা দেখে তার পরের দিন অর্থাৎ ৮ এপ্রিল ডেপুটি কমিশনার আরভিং চিঠি লিখলেন লেফটেনান্ট গভর্নর মাইকেল ও’ডয়ারকে। তাতে অনুরোধ করলেন অমৃতসরে সেনা পাঠানোর জন্যে। কারণ অমৃতসরের আবহাওয়া ক্রমশই গরম হয়ে উঠছে। হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে একতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে শহরের নিয়ন্ত্রণ ইংরেজদের হাতে থাকা মুশকিল হবে।

 

৯ এপ্রিল রামনবমী। অমৃতসরের মানুষ ঠিক করলেন জাতীয় ঐক্য দিবস পালন করবেন। রামনবমী উপলক্ষ্যে শুরু হল এক শোভাযাত্রা। তাতে দলে দলে যোগ দিলেন মুসলমানরাও। হিন্দুরা মুসলমানদের হাত থেকে জল খেল, যা সেই সময় ভাবাই যেত না। আবার শহর জুড়ে আওয়াজ উঠল— ‘হিন্দু-মুসলমান জিন্দাবাদ।’ ‘গান্ধিজি জিন্দাবাদ।’ এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই মিছিল দেখছিলেন আরভিং। তাঁর কাছাকাছি আসতেই বাজনা নিয়ে কিছু মানুষ গাইতে শুরু করলেন ব্রিটিশদের জাতীয় সঙ্গীত— ‘গড সেভ দ্য কিং।’ ব্যক্তিগতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে বা কোনও ইংরেজের জন্যেই কোনও বিদ্বেষ তাঁদের নেই। তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের দেশের শাসন নিজেদের হাতে নিতে চান।

 

কিন্তু সাধারণ মানুষের এই সফল আন্দোলন ইংরেজদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই ১০ এপ্রিল আন্দোলনকারীদের তাতিয়ে তুলতে লেফটেনান্ট গভর্নর ও’ডয়ার নির্দেশ দিলেন ডক্টর সত্যনারায়ণ এবং ডক্টর কিচলুকে গ্রেফতার করে হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালা শহরে পাঠিয়ে দিতে। তিনি জানতেন, এমন সিদ্ধান্তে আন্দোলনকারীরা সত্যাগ্রহের পথ ছেড়ে হিংসাত্মক কিছু ঘটনা ঘটাবেন এবং সেই সুযোগে কঠোর হাতে এই আন্দোলন দমন করা যাবে।

বাস্তবে ঘটলও তা-ই। তাঁদের নেতাদের গ্রেফতারের খবর পেয়ে সাধারণ মানুষ দোকানপাট বন্ধ করে ডেপুটি কমিশনারের বাড়ির দিকে মিছিল করে এগিয়ে গেলেন। পথে পড়ল হল ব্রিজ। তার উলটোদিকে সশস্ত্র পুলিশ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ডেপুটি কমিশনার আরভিং। মিছিল ব্রিজ পার করার উপক্রম করতেই দুজন পুলিশ গুলি চালালেন। কয়েকজনের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু ঘটল। আরও বেশ কিছু মানুষ আহত হলেন। কিন্তু জায়গা ছেড়ে কেউই নড়লেন না। আরও কিছু পরে পুলিশের বড় একটা বাহিনী আসায় মিছিল ফিরে আসতে বাধ্য হল। মৃত এবং আহতদের নীরবে বয়ে নিয়ে এলেন তাঁরা। তখনও আন্দোলন অহিংসভাবেই চলছিল।

লেফটেনান্ট গভর্নর মাইকেল ও’ডয়ার

লেফটেনান্ট গভর্নর মাইকেল ও’ডয়ার

কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই জায়গায় জায়গায় পুলিশ সাধারণ মানুষকে উত্যক্ত করতে শুরু করল। এবার সবার ধৈর্য্যের বাঁধ গেল ভেঙে। মিছিল আবার ফিরে গেল পুরনো জায়গায়। মানুষ হাতের কাছে ইঁট-পাথর যা পেল, তা-ই তুলে রণং দেহি মূর্তিতে মুখোমুখি হল ইংরেজদের। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে দুই আইনজীবী সালারিয়া এবং মকবুল মাহমুদ সবাইকে শান্ত হতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু তাঁদের উপেক্ষা করেই দু-দল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল। গুলি চলল আবার। অন্তত কুড়ি জন মারা গেলেন। আহত হলেন আরও বেশি। তাঁদের নিয়ে হাসপাতালে গিয়েও ফল হল না। পুলিশের নির্দেশে কেউ তাঁদের চিকিৎসা করতে রাজি নন।

এবার মানুষ রাগে অন্ধ হয়ে একের পর এক সরকারি অফিসে তাণ্ডব শুরু করলেন। পোস্ট অফিস, রেলওয়ে স্টেশন, ব্যাঙ্ক— মারমুখী জনতার লুঠতরাজ আর ধ্বংসলীলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীও বিশেষ সুবিধা করতে পারল না। চারজন বৃটিশ ব্যাঙ্ককর্মী প্রাণ হারালেন মারধোরের কারণে। এক ইংরেজ ভদ্রমহিলাও হেনস্থা হলেন সাধারণ মানুষের হাতে। যদিও যথাসময়ে পুলিশ এসে তাঁর প্রাণ বাঁচান।

সেদিন সন্ধ্যাবেলা ও’ডয়ার অমৃতসরের পরিস্থিতি জানতে পেরে পরদিন ১১ এপ্রিল অমৃতসরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে কারফিউ জারি করলেন। একসঙ্গে চারজনের বেশি মানুষ বাইরে বেরোতে পারবেন না। মিটিং-মিছিল করার কোনও অনুমতি রইল না। আগের দিন পুলিশের গুলিতে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের শেষকৃত্য শেষ করার জন্য দুপুর দুটো পর্যন্ত সময় দেওয়া হল। ভারতীয়দের হাতে স্বজাতির হত্যা ইংরেজরা মোটেও মেনে নিতে পারল না। তাদের জাতিগত অহংকারে আঘাত পড়েছে তখন। তাই ঘোষণা করা হল, যে কোনও নিয়মভঙ্গে সরাসরি গুলি চালানো হবে। সেদিন সন্ধ্যাবেলা অমৃতসরে তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজিনাল্ড ডায়ার। আরভিং তাঁর হাতেই শহরের আইন শৃঙ্খলার ভার তুলে দিলেন।

 

১২ এপ্রিল জেনারেল ডায়ার সেনাবাহিনী নিয়ে শহরের বুকে কুচকাওয়াজ করলেন। উদ্দেশ্য ছিল শহরবাসীকে ইংরেজদের শক্তি দেখিয়ে ঘরে বসে থাকতে বাধ্য করা। কিন্তু মরিয়া কিছু মানুষ লুকিয়ে সভা করলেন হিন্দু সভা হাই স্কুলে। ঠিক হল, পরদিন আবার হরতাল পালন করবেন অমৃতসরের মানুষ। জালিয়ানওয়ালা বাগে সভা করে বন্দি ডক্টর সত্যনারায়ণ এবং ডক্টর কিচলুর পাঠানো চিঠি পড়া হবে। সাধারণ মানুষের সামনে এই দুই নেতার উদাহরণ তুলে ধরা হবে।

 

জেনারেল ডায়ার

জেনারেল ডায়ার

১৩ এপ্রিল বৈশাখী উৎসব। ১৬৯৯ সালে এই দিনে গুরু গোবিন্দ সিংহ খালসা বাহিনী গঠন করেছিলেন। প্রতি বছর ধুমধাম করে এই দিনটা শহরবাসী পালন করে থাকেন। কিন্তু সে বছর অমৃতসর যেন এক কালবৈশাখী ঝড়ের আগে থমথম করছে। জেনারেল ডায়ার সেদিনও সেনাদের নিয়ে বেরোলেন। ড্রাম পিটিয়ে ঘোষণা করা হল— চারজনের বেশি মানুষ একসঙ্গে জড়ো হলে গুলি চালানো হবে। কোনও মিছিল বরদাস্ত করা হবে না। রাত আটটার পরে রাস্তায় বেরোনোর কোনও অনুমতি নেই। কিন্তু সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার পরেই একদল ছেলে টিনের কৌটো বাজাতে বাজাতে রাস্তায় নামল। তারা চারদিকে খবর ছড়িয়ে দিল বিকেল সাড়ে চারটেয় জমায়েত হবে জালিয়ানওয়ালা বাগে। দুপুর দুটো থেকেই দলে দলে মানুষ জড়ো হতে শুরু করলেন। জেনারেল ডায়ারের কাছেও সে খবর পৌঁছাল। ৫০ জন ভারতীয় সৈন্য এবং ৪০ জন গোর্খা নিয়ে তিনি রওনা হলে জালিয়ানওয়ালা বাগের দিকে।

জালিয়ানওয়ালা বাগ একটা অসমান ছোট মাঠ তখন। চারদিকে তার বাড়ির দেওয়াল। মাঠে ঢোকার একটাই প্রবেশপথ। চারদিকে বাড়ির ফাঁকফোকরে ছোট ছোট গলি। সেখান থেকে একজন মানুষ যাওয়াই কষ্টসাধ্য। ডায়ার এই সুযোগটাই নিলেন। মঞ্চে তখন বক্তৃতা চলছে। প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ জমা হয়েছেন। পুরুষদের সঙ্গে আছেন নারী এবং শিশুও। মাঠের প্রবেশপথ আটকে তিনি ৫০ জন সৈন্য মোতায়েন করলেন নিরস্ত্র জনতার সামনে। তারপর উপস্থিত মানুষজনকে কোনও হুঁশিয়ারি না দিয়েই তিনি গুলি চালানোর আদেশ দিলেন।

 

গান্ধি চলচ্চিত্রের দৃশ্য
গান্ধি চলচ্চিত্রের দৃশ্য

 

গর্জে উঠল ৫০টা রাইফেল। গুলিবৃষ্টির সামনে অসহায় মানুষ ছোটাছুটি শুরু করলেন। মাঠের একদিকে ছিল একটা অগভীর কুয়ো। প্রাণ বাঁচাতে তার মধ্যে ঝাঁপ দিতে শুরু করলেন কেউ কেউ। পরে ওই কুয়ো থেকে ১২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। চারদিকে বাড়ির দেওয়াল। তার মধ্যে সরু গলি দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলেন অনেকে। ডায়ারের নির্দেশে গুলি চলল সেদিকেও। গুলিতে যত না মানুষ হতাহত হলেন, তার থেকেও বেশি মানুষ আহত হলেন পদপিষ্ট হয়ে। ৫০ জন সৈন্যর রাইফেলের ৩৩ রাউন্ড গুলি শেষ হলে পুরো মাঠে মানুষের আর্তনাদ ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই। ১৬৫০ রাউন্ড গুলি চলেছিল মোট। আহত এবং মৃত আন্দাজ দু-হাজার। সঠিক সংখ্যা কোনোদিনই জানা যায়নি। সারা বিশ্ব জুড়ে উপনিবেশ গড়ে তোলার কারণে বলা হত, বৃটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য কখনও অস্ত যায় না। সেদিন বিকালে শিশু-মহিলাসহ নিরস্ত্র মানুষ খুনের লজ্জায় অমৃতসরে সূর্য তাড়াতাড়িই মুখ লুকিয়েছিল বোধ হয়। স্তম্ভিত শহরবাসী নিজের আত্মীয়-বন্ধুদের খুঁজতে বেরোলেন মাঠে পড়ে থাকা অসংখ্য দেহের মধ্যে। কিন্তু অন্ধকারে সেটাও সম্ভব হয়ে উঠল না। রাত আটটার মধ্যে বাড়ি ফেরার নির্দেশ অমান্য করার সাহসও নেই কারও তখন। সারারাত মাঠেই পড়ে থেকে রক্তক্ষরণে মারা গেলেন অসংখ্য মানুষ। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম কালো অধ্যায় লেখা হল ১৯১৯-এর ১৩ এপ্রিল।

দিকে দিকে প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠলেন মানুষ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৃটিশদের দেওয়া নাইট উপাধি ফিরিয়ে দিলেন। সমগ্র ভারতবর্ষ সেদিন ক্ষণিকের জন্যে হলেও অমৃতসরের সেই ছোট মাঠটাতে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল বুকের আগুনটুকু জ্বালিয়ে। সেই আগুন সহজে নেভেনি। দু-দশক পরে উধম সিং লন্ডনে গিয়ে লেফটেনান্ট গভর্নর মাইকেল ও’ডয়ারকে হত্যা করে জালিয়ানওয়ালা বাগের প্রতিশোধ নিয়েছিলেন। কিন্তু সে অন্য গল্প। সে গল্প অন্যদিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.