বাউন্সি বল সুজন দাশগুপ্ত

কয়েকদিন হল ভোরবেলায় ডিং-ডং করে কেউ ডোরবেল বাজাচ্ছে। সেই আওয়াজে একেনবাবুর ঘুম ভাঙে কি না জানি না, ভাঙলেও সাড়াশব্দ পাই না। প্রমথ আবার ঠিক ওই সময়ে বাথরুমে থাকে, সুতরাং বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা আমাকেই খুলতে হয়। খুলে অবশ্য কাউকে দেখতে পাই না! নিশ্চয় কোনও দুষ্টু ছেলের বদমায়েশি! নিচের তলার অ্যাপার্টমেন্টে কিছুদিন হল এক ইরানি দম্পতি এসেছে। তাদের বছর ছয়েকের একটা ছেলে আছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস কীর্তিটা ওই ছোঁড়ার। কিন্তু প্রমাণ তো নেই। যদি ব্যাটাকে হাতেনাতে একদিন ধরতে পারি…

গল্প তো শুরু করে দিলাম, কিন্তু আমরা কে, কোথায় থাকি, কী করি— সেটাই তো বলতে ভুলে গেছি! প্রথমে নিজের পরিচয় দিই। আমার নাম বাপি দে। আমি এন ওয়াই ইউ, অর্থাৎ নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে পড়াই। প্রমথ আমার বন্ধু, সেই ছোট্টবেলা থেকে। প্রমথ কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের পোস্ট-ডক ফেলো। পোস্ট-ডক ফেলো মানে পিএইচডি শেষ করে গবেষণা করছে। কী গবেষণা করে জানি না, কিন্তু যেটা করে, সেটা হল আমার পিছনে সব সময়ে লাগা। শুধু আমার নয়, অল্প-বিস্তর সবার পিছনেই লাগে— তবে বিশেষ করে একেনবাবুর। দু-বছর হল সবাই মিলে ম্যানহাটানের সালিভান স্ট্রিটে একটা অ্যাপার্টমেন্ট শেয়ার করছি।

একেনবাবু এককালে কলকাতার গোয়েন্দা দপ্তরে ছিলেন। কয়েক বছর আগে একটা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে এসেছিলেন। আসতে না আসতেই বিখ্যাত মুনস্টোন চুরির রহস্য উদঘাটন করে নিউ ইয়র্ক পুলিশের ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের পেয়ারের লোক হয়ে গেলেন। প্রোগ্রাম শেষ করে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন বটে, কিন্তু কিছুদিন আগে একটা ফুলব্রাইট স্কলারশিপ বাগিয়ে চলে এসেছেন… এন ওয়াই ইউ-তে ক্রিমিনোলজি রিসার্চ প্রোগ্রামে যোগ দিতে। রিসার্চের ফাঁকে ফাঁকে দেখি গোয়েন্দাগিরিও চালাচ্ছেন।

একেনবাবু একটা ক্যারেক্টার। বেঁটেখাটো টিংটিঙে খ্যাংড়াকাঠি চেহারা, খালি ‘স্যার, স্যার’ করেন— অত্যন্ত ইরিটেটিং, আর সেই সঙ্গে অজস্র আলতুফালতু প্রশ্ন। পোশাক-পরিচ্ছদও আনইম্প্রেসিভ। অর্থাৎ ব্যোমকেশ বা ফেলুদা টাইপ নন— না চেহারায় না ব্যক্তিত্বে। তবে একটা কিছু ওঁর মধ্যে আছে, যার জন্য খুঁতখুঁতে প্রমথও রাজি হয়েছে ওঁর সঙ্গে অ্যাপার্টমেন্ট শেয়ার করতে।

 

সকালে কফি খেতে খেতে বেল বাজানোর কথাটা তুলতেই প্রমথ বলল, “তুই ছেলে বলছিস কেন? মেয়েও তো হতে পারে!”

“এই বিল্ডিং-এ ওই বয়সি মেয়ে কোথায় শুনি?”

“কারোর বাড়িতে বেড়াতে এসেছে হয়তো। আর কমবয়সিই বা ধরছিস কেন?”

“কী ইডিয়টের মতো কথা বলছিস! কমবয়সি না হলে কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের লোক এভাবে সকালে এসে কারও ডোরবেল বাজায়?”

“হয়তো সুস্থ মস্তিষ্কের নয়।”

বিরক্ত হয়ে আমি আর একটা কথাও বললাম না।

প্রমথ তখন অন্য লাইন ধরল, “ঘুম ভাঙলে তোর সমস্যাটা কী? এমনিতে তো অ্যালার্মের আওয়াজে উঠতিস, এখন না হয় ডোরবেল শুনে উঠছিস!”

 

সত্যিই প্রমথর সঙ্গে কোনও সিরিয়াস আলোচনা করা যায় না। ওর একমাত্র উদ্দেশ্য, আমাকে হেনস্থা করা। সেই স্কুল লাইফ থেকে করে আসছে! তাই একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করলাম। “আপনার কী মনে হয়?”

একেনবাবু কসরত করে টোস্টে মাখন লাগাচ্ছিলেন।

“কীসের কী মনে হয় স্যার?”

বিরক্তি লাগল আমার। “এতক্ষণ কী আলোচনা চলছিল… শুনছিলেন না?”

“না না, স্যার, শুনছিলাম। আসলে ব্যাপারটা একটু কনফিউজিং ঠিকই।”

“কে ডোরবেল বাজাচ্ছে মনে হয়?”

“কতদিন ধরে এটা চলছে স্যার? আমি তো খেয়ালই করিনি।”

“তা করবেন কেন, আপনি তো দরজা বন্ধ করে ভোঁসভোঁস করে ঘুমোন!”

“এটা ঠিকই বলেছেন স্যার, ভোরের দিকে ঘুমটা আমার একটু গাঢ় হয়। কিন্তু চিন্তা করছেন কেন স্যার… পরের বার সকালে বেল বাজালে দরজা খুলবেন না।”

“এটা কী বলছেন, কেউ যদি বিপদে পড়ে এসে বেল বাজায়! ব্যাড নেইবার হয়ে খিল তুলে বসে থাকব।”

“সেটাও ঠিক স্যার।”

 

পরের দিন আমি বেল বাজার অপেক্ষা করলাম না। একটু আগে উঠে প্রমথকে বললাম, “তুই ডোরবেল না বাজা পর্যন্ত বাথরুমে যাবি না।”

“মামার বাড়ির আবদার নাকি!”

“না, তুই যাবি না!”

প্রমথ যাবেই, আমিও যেতে দেব না। এইরকম টানা হ্যাঁচড়ার মধ্যেই ডোরবেল বাজল। “চল দেখি, কে বাজাচ্ছে,” বলে ওকে প্রায় টানতে টানতে নিয়ে গেলাম।

দরজা খুলে কাউকে দেখব না ভেবেছিলাম। কিন্তু না, সামনে একটা বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।

“তুমি প্রতিদিন বেল বাজাও?” আমি একটু ধমকের সুরেই জিজ্ঞেস করলাম।

ছেলেটা বলল, “হ্যাঁ।”

এরকম সোজা-সাপটা স্বীকারোক্তি শুনব ভাবিনি। বিস্ময়টা চেপে রেখেই জিজ্ঞেস করলাম। “বেল বাজিয়ে পালিয়ে যাও কেন?”

প্রশ্নটা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে জিজ্ঞেস করল, “আমার সাদা রঙের বলটা দেখেছ?”

“না, দেখিনি। কিন্তু সকালে এসে এভাবে বেল বাজাও কেন? কোথায় থাকো?”

নো উত্তর। বোঁ করে ঘুরে সিঁড়ি দিয়ে নিচে অদৃশ্য হল।

“অতি ত্যাঁদড় ছেলে!” আমি স্বগতোক্তি করলাম।

“আমার তো বেশ লাগল। যা জানার জেনে, তোর ফালতু প্রশ্নকে পাত্তা না দিয়ে দিব্বি চলে গেল।” আমি চটেছি দেখে প্রমথ আমোদ পেয়েছে।

 

ভেবেছিলাম এই বল আর বেলের ব্যাপারটা চুকে যাবে। কোথায় কী! বিকেলবেলা নিচের তলা থেকে তারেক এসে হাজির।

“এই যে দাদা, কেমন আছেন?”

“ভালো, তোমার খবর কী?

“আপনাদের দোয়ায় ঠিকই আছি। আচ্ছা দাদা, রায়হান এসেছিল?”

তারেক বাংলাদেশের। হরদম দোয়া, নাস্তা, গোসল, খালা, মুরুব্বি— এসব শব্দ ব্যবহার করে। তবে সবসময় নয়। আগে গোলমাল লাগত, এখন বুঝতে পারি কী বলছে।

“রায়হান?”

“আমাদের পাশের তলায় নতুন যে ভাড়াটে এসেছে, তাদের ছেলে।”

“হ্যাঁ, একটা বাচ্চা ছেলে এসেছিল বটে। কিন্তু সে রায়হান কি না সেটা তো জানি না।”

“তাহলে রায়হান। আমিই ওকে দেখা করতে বলেছিলাম।”

“সাদা বলের খোঁজ করতে! তাও আবার সাত সকালে?” আমি একটু শ্লেষের সঙ্গেই প্রশ্নটা করলাম।

“বুঝতে পারছি দাদা চটেছেন। আসলে অত সকালে কেন এসেছিল জানি না। ক-দিন আগে ওদের বাড়িতে গিয়ে দেখি বলটা হারিয়ে যাওয়ায় ভাবি ভীষণ রেগে ছেলেটাকে বকাবকি করছিলেন। নিজেও খুঁজছিলেন। আমিই তখন বললাম আশেপাশে খোঁজখবর করতে, যদি কেউ দেখে থাকেন।”

 

আমাদের মধ্যে যখন কথাবার্তা চলছে একেনবাবু ঘরে ঢুকলেন। আমাদের বৈকালিক কফি পানটা এই সময়েই হয়। আমাদের মানে— আমার, প্রমথর আর একেনবাবুর। প্রমথর আজকে আসতে আসতে সন্ধে হয়ে যাবে। তারেককে বললাম আমাদের সঙ্গে কফি খেয়ে যেতে। কফির জল চড়াতে চড়াতে একেনবাবুকে বললাম, “সকালবেলায় বেল বাজানোর রহস্য উদ্ধার হয়েছে… তার জন্য দায়ী আপনার এই বাংলাদেশি বন্ধু তারেক ভাই।”

“কী ব্যাপার স্যার?”

তারেক একই কথা একেনবাবুকে বলল।

“কী রকম বল স্যার, টেনিস বল?”

“বাউন্সি বল।”

“সেটা আবার কী স্যার?”

“যে বলগুলো খুব লাফায়।”

“হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার, বাচ্চাদের তো ওরকম বল নিয়ে খেলতে দেখেছি। ওটাকে যে বাউন্সি বল বলা হয় জানতাম না।”

“হ্যাঁ, সুপার বলও বলা হয়। সাইজে ছোটো, কিন্তু একটু জোরে মাটিতে ছুঁড়লে তিনতলা পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। নিচের ল্যান্ডিং-এ যখন বলটা নিয়ে ও খেলছিল, লাফিয়ে উঠে আপনাদের ল্যান্ডিং-এ বা ওপরে কোথাও চলে গিয়েছিল। বেচারা অনেক খুঁজেও পায়নি।”

“তিনতলা পর্যন্ত উঠে যায়? অ্যামেজিং টেকনোলজি স্যার, ট্রুলি অ্যামাজিং!” তারপর আমাকে প্রশ্ন করলেন, “আপনি তো স্যার বিজ্ঞানী, কী করে বানানো হয় এরকম বল?”

“কী মুশকিল, ফিজিক্স পড়েছি বলে সবকিছু জানতে হবে নাকি? এক ধরনের বাউন্সি বল আছে যেগুলো সাইজে একটু বড় আর ফাঁপা, তার মধ্যে হিলিয়াম গ্যাস আর হাই-প্রেশারে বাতাস থাকে। সেগুলোকে বোধ হয় স্কাই বল বলে। কিন্তু তারেক যে বাউন্সি বলের কথা বলছে সেগুলো সলিড বল। মাটিতে ফেললে দুটোই খুব লাফায়। বাউন্সি বল আবার লাফিয়ে কোনদিকে যাবে দেবা না জানন্তি!”

“খুব দামি স্যার?”

“মনে হয় না… ছোটদের খেলার জিনিস, কত আর দাম হবে।”

“তারেককে বললাম, তুমি বরঞ্চ ছেলেটাকে একটা বল কিনে দাও, তাহলেই তো চুকে গেল ঝামেলা। আর আমাদের বাড়িতে এসে বেল বাজাতে বারণ কোরো।”

“আরে না দাদা, রায়হানের বাড়িতে ওরকম আরও বল আছে। ভাবি ওকে ‘ভ্যালু অফ মানি’ শেখাচ্ছিলেন। জিনিসপত্র হারিয়ে পয়সা অপচয় করার তো কোনও মানে হয় না।”

 

তারেক চলে যাবার একটু বাদেই প্রমথ এল। বলল, “তোর সেই ছোকরা তো এখনও বল খুঁজে বেড়াচ্ছে।”

“তুই দেখলি?”

“হ্যাঁ।”

“ওর মা-র সঙ্গেও পরিচয় হল। দারুণ সুন্দরী। বললেন বিল্ডিং-এর কারোর সঙ্গেই পরিচয় হয়নি, তারেক ছাড়া। ‘চাই’-এর নেমন্তন্ন করলেন। বললেন, তারেক আজ আসছে, আমরাও যদি আসি।”

“চাই-টা কি বস্তু?”

“ইরানিয়ান চা। খেয়েছিস কখনও? দারচিনি, আদা, গোলমরিচ, লবঙ্গ, এলাচ— এইসব মিশিয়ে… বেশ একটা কিক আছে।”

“বলেন কী স্যার! চায়ের টেস্টই তো পালটে যাবে!”

“সেজন্যেই তো ওটা ইরানিয়ান চা। আমি তো বলে দিলাম, যাব। ধরে নিচ্ছি, তোরাও আসবি।”

আমি একটু ইতস্তত করছিলাম। একেনবাবু বললেন, “চলুন না স্যার, একটা নতুন এক্সপিরিয়েন্স হবে।”

 

রায়হানের মা-র নাম নাজরিন শিরাজি। নাজরিন শব্দের অর্থ বুনো গোলাপ ফুল। প্রমথ ভুল বলেনি, সত্যিই সুন্দরী। ওঁর বরের নাম ফারহাদ। সুপুরুষ, হাসিখুশি। কানেটিকাটে ওঁর কার্পেটের ব্যাবসা, ম্যানহাটানে এসেছেন তার ব্রাঞ্চ খুলতে। তারেকের কাছে আমাদের কথা শুনেছেন। বুঝলাম ফারহাদই আমাদের সবাইকে ডাকার কথা নাজরিনকে বলেছিলেন। আজকের চা-খাওয়া নিতান্তই প্রাথমিক আলাপচারিতার জন্য, শনিবার একটা ফুল-কোর্স পার্সিয়ান ডিনারে আসার নেমন্তন্ন করলেন। আমি কিন্তু-কিন্তু করছিলাম। চায়ের পর আবার কয়েকদিন বাদেই এভাবে ডিনার খেতে আসা। কিন্তু একেনবাবু আর প্রমথর দেখলাম তাতে কোনও সমস্যা নেই।

ফারহাদ বললেন, “আপনি শনিবার ব্যস্ত থাকলে কবে সুবিধা হবে বলুন।”

তখন বললাম, “না না, ঠিক আছে, আমিও আসব।”

এই সময় একটা ফোন আসায় ফারহাদ একটু ভেতরে গেলেন; নাজরিন কিচেনে খুটখাট করছেন। সেই ফাঁকে বিশ্বনিন্দুক প্রমথ আমাকে বলল, “এত যে মেলা আত্মীয়তা করছেন, পারসিয়ান কার্পেট কেনার মতো রেস্ত আমাদের পকেটে নেই সেটা বোধ হয় জানেন না!”

না, কারণটা মনে হয় অন্য। ফারহাদ ব্যাবসা নিয়ে সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন। স্ত্রী ও ছেলে বেশিরভাগ সময়েই একা থাকেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে পরিচয় থাকাটা সিকিউরিটির দিক থেকে ভালো।

 

নাজরিন আর ফারহাদ দুজনেই ইরানের সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে এসেছেন। নাজরিন সদা হাস্যময়ী, কথা বলেন কম। ফারহাদ হচ্ছেন গপ্পে লোক। ইরানের নানান গল্প শুনলাম ওঁর কাছ থেকে। ফারহাদের বাবা ছিলেন ইরানের শাহ রেজা পাহলবির খুব কাছের লোক। ইরান রেভলিউশনের সময়ে শাহ যখন পালিয়ে মিশরে চলে যান, তখন শাহর জিনিসপত্র পাচার করতে অনেক সাহায্য করেছিলেন ফারহাদের বাবা। শাহ চলে যাবার পর বেশ কিছুদিন তেহরানে লুকিয়ে ছিলেন। তারপর পরিবারকে নিয়ে কোনোমতে পালিয়ে যান দক্ষিণ আমেরিকায়। সেখান থেকে প্রথমে পানামা, তারপর মার্কিন মুলুকে। তেহরানের বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে প্রায় শূন্য পকেটে শুরু করেছিলেন ইরানিয়ান কার্পেটের ব্যাবসা। প্রথমে বড় বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোরে কার্পেট সাপ্লাই করতেন। নিজেদেরও একটা দোকান ছিল স্ট্যামফোর্ডে। বাবার মৃত্যুর পর সেটা বন্ধ করেছেন। এখন ম্যানহাটানে একটা দোকান খুলবেন বলে এসেছেন।

 

ঘরের আসবাবপত্র থেকেই বোঝা যায় ফারহাদরা খুবই বড়লোক। ঘরের কার্পেট, মেহগনি কাঠের সূক্ষ্ম কাজের চেয়ার, বসার কুশন, সুদৃশ্য কফি টেবিল তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। বিশাল এটিজারেতে সুন্দর সুন্দর এনামেলের মিনাকারি গয়নার বক্স, খতমকারি কৌটো, ছোট নক্সা-আঁকা জলের পাত্র, প্লেট, কাপ আর বহু জিনিস যার নামও জানি না, বর্ণনাও করতে পারব না ঠিক করে। ‘মিনাকারি’ আর ‘খতমকারি’ লিখতে পারলাম কারণ কিছুদিন আগেই একটা পার্সিয়ান আর্ট এক্সিবিশনে গিয়ে ওই কাজগুলো দেখেছিলাম বলে।

মাঝখানের একটা তাকের ঠিক মধ্যিখানে অনেকগুলো ছোট-ছোট সাদা বল সাজানো— সাইজে গুলির থেকে একটু বড়, এক ইঞ্চির মতো ব্যাস হবে। তাদের মধ্যে পাঁচটা বলের ওপরে একটা করে রোমান অক্ষর R, A, F, H আর D লেখা। সত্যি কথা বলতে কী, এইসব দামি দামি ডিসপ্লের মাঝখানে ওগুলোকে দেখে অবাকই হলাম। নিশ্চয় সাদামাটা বল নয়। ফস করে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, “বলগুলো…” আমার চোখে বিস্ময় দেখে ফারহাদ বললেন, “জাম্পিং বল। রায়হান ওগুলো নিয়ে খেলতে ভালোবাসে। আগে ডজন ডজন কিনতাম, প্রতিদিন খেলতে গিয়ে কয়েকটা করে হারাত। পয়সা বাঁচতে এখন নিজেই ওর জন্যে বলগুলো বানাই।”

নিতান্তই রসিকতা, প্রতিদিন এক ডজন সুপার বল কেনার আর্থিক ক্ষমতা ওঁর আছে।

“আপনি নিজে বানান স্যার? ভেরি ইন্টারেস্টিং!”

“ওটারই একটা বোধ হয় হারিয়েছে। আমার কাছে এসেছিল খোঁজ করতে।” আমি বললাম।

“হ্যাঁ, বেচারা ভীষণ মন খারাপ করেছে। এই বিল্ডিং-এই কোথাও নিশ্চয় আছে… চোখে পড়লে দেখবেন তো। বেচারা খুব মন খারাপ করে আছে।” এবার মুখ খুললেন নাজরিন। মায়ের মন তো!

আমরা সবাই বলগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি দেখে নাজরিন বোধ হয় বুঝলেন। “আপনারা নিশ্চয় ভাবছেন, এতগুলো বল থেকে তো একটা দিয়েই দেওয়া যায়, কিন্তু না, আমরা ওকে শেখাবার চেষ্টা করছি দায়িত্বশীল হতে। কিছু হারালেই আরেকটা পাওয়া যায় না।”

“তা তো বটেই ম্যাডাম।”

“ইনি একজন মস্ত বড় গোয়েন্দা,” একেনবাবুকে দেখিয়ে তারেক বলল। “দেখবেন, ঠিক খুঁজে বার করবেন।”

“কী যে বলেন স্যার!” বলে একেনবাবু এটিজারের কাছে গিয়ে বলগুলো দেখলেন।

তারপর বললেন, “আমরা খেয়াল রাখব, ম্যাডাম… যদি চোখে পড়ে।”

“রায়হান কোথায়?” তারেক জিজ্ঞেস করল।

“ওর দাদুর বাড়িতে গেছে।”

 

ইরানের ইতিহাস ভালো জানতাম না। নাদির শাহর নাম স্কুলে ইতিহাসের বইয়ে পড়েছিলাম। দিল্লিকে তছনছ করে মুঘলদের ময়ূর সিংহাসন আর সেই সঙ্গে আকবরি হিরে, কোহিনুর ইত্যাদি লুঠ করে ইরানে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেটা তো ১৭৩৯ সালের ব্যাপার! কেন জানি না, ওই তারিখটা মনে ছিল। তারপর সে খুনও হয়েছিল যদ্দূর মনে পড়ছে, কবে মনে নেই। তারপর দুশ-আড়াইশ বছর ইরানে কী ঘটেছে, অল্পই জানি। এখন আর না জেনে উপায় নেই। একেনবাবুর অপরিসীম আগ্রহ কোনও কিছু শুনলেই সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা।

আমার বুক শেলফে ইরানের ইতিহাসের ওপর একটা বই ছিল। সস্তায় বই বিক্রি হচ্ছে দেখলে আমি কিনি, কিন্তু সময় করে পড়া আর হয় না। বইটা একেনবাবুর চোখে পড়েছে এবং সেটি হস্তগত করেছেন। এখন ইরানের ইতিহাস শুধু জানতে হবে না, জানতে হবে একেনবাবুর বকবকানি শুনে।

সক্কাল বেলাতেই শুরু হল।

“বুঝলেন স্যার, রেজা পাহলবি গদিচ্যুত হন ১৯৭৯ সালে। ওঁর প্রচুর ধনরত্ন ছিল। লাকিলি তার বেশিরভাগই রক্ষা পেয়েছে, সাজানো আছে তেহরানের মিউজিয়ামে। আপনি তেহরান গেছেন স্যার?”

“না।”

“ধনরত্নগুলো নাকি দেখার মতো। আচ্ছা স্যার, ওগুলোর বেশিরভাগই তো এক সময়ে আমাদের ছিল, মানে মুঘল পিরিয়ডে… ওই নাদির শাহর ব্যাপারটা আর কী।”

“কী উলটোপালটা বকছেন মশাই! ইরানের সভ্যতা কি আজকের! ওদের নিজেদের সম্পদের কোনও অভাব ছিল?”

“কী মুশকিল স্যার, ময়ূর সিংহাসন আমাদের ছিল না? কোহিনুর মণি?” একেনবাবুও ছাড়বেন না।

“আপনি মশাই, ইতিহাস ভালো করে পড়ুন। কোহিনুর মণি এখন ব্রিটিশদের কাছে আর ময়ূর সিংহাসন গালিয়ে ফেলা হয়েছে বহুদিন আগে। সেই গলানো সোনা এখন কোন দেশে আছে কে জানে!”

প্রমথর কাছে থাবা খেয়ে একেনবাবু একটু চুপ করলেন। তারপর একটা পারম্পর্যহীন প্রশ্ন।

“স্যার, বাউন্সি বল আর জাম্পিং বল কি এক?”

প্রমথ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এর সঙ্গে ইরানের ইতিহাসে সম্পর্ক কী?”

“না না স্যার, এটা অন্য প্রসঙ্গ।”

“সে তো বুঝতেই পারছি। উত্তর হল একই। আবার এদের কতগুলোকে ক্রেজি বলও বলা হয়… যেগুলো কোনদিকে লাফাবে বলা শক্ত।”

“এগুলো বানানো তো স্যার কঠিন কাজ, তাই না?”

“মোটেই নয়, আমিই তো ছেলেবেলাতেই বানিয়েছি।”

‘ছেলেবেলায় বানিয়েছি’… যত্তসব! প্রমথ মাঝেমাঝেই বড়বড় কথা বলে।

“তুই আবার কবে বানালি? আমি তো দেখিনি!”

“তুই কি আমার গার্জেন যে সবকিছু তোকে দেখিয়ে করতে হবে?” তারপর একেনবাবুকে উদ্দেশ্য করে বলল, “বাপি বানাতে পারবে কিনা জানি না, কিন্তু শিখিয়ে দিলে আপনি পারবেন।”

“কী যে বলেন স্যার!”

 

ব্যাপারটা সত্যিই খুব কঠিন নয়। একেনবাবুর অনুরোধে প্রমথ তার পরের দিনই কী করে বাউন্সি বল বানানো যায় তার ডেমনস্ট্রেশন দিল। খুবই সহজ। ল্যাব থেকে আইসো-প্রোপাইল অ্যালকোহল আর সোডিয়াম সিলিকেট, যাকে লিকুইড গ্লাস বলা হয়, নিয়ে এল। তারপর এক চামচ অ্যালকোহল আর চার চামচ লিকুইড গ্লাস মিশিয়ে একটা কাঠি দিয়ে নাড়তে নাড়তেই জলীয় মিক্সচারটা বেশ শক্ত হয়ে গেল। হাতে গ্লাভস পরে সেটা হাতে ঢেলে ময়দা ঠাসা করে সেটাকে বেশ গোল্লা করে ফেলল। তারপর বলল, “এই দেখুন, আপনার বাউন্সি বল।” বলে ওটা মেঝেতে ফেলতেই দেখি বেশ লাফিয়ে উঠল।

একেনবাবু তো মুগ্ধ।

“আরও নানাভাবে করা যায়, একটা সহজ উপায় দেখালাম।”

মানতেই হবে প্রমথ এগুলো বেশ জানে। আমি যখনকার কথা বলছি, তখন ইন্টারনেটে এইসব কায়দাকানুন দেখতে পাওয়া যেত না। ও কোত্থেকে জেনেছিল কে জানে!

“গ্লাভস না পরে এগুলো আবার করতে যাবেন না।” একেনবাবুকে সতর্ক করল প্রমথ।

“না না স্যার। আমি আপনার এইসব কেমিক্যালে হাতই দেব না। কিন্তু অ্যামেজিং স্যার, ট্রুলি অ্যামেজিং।” বলে একেনবাবু বেশ কিছুক্ষণ বসে পা নাড়লেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা স্যার। এটিজারেতে পাঁচটা বলের ওপর রোমান অক্ষরে লেখা ছিল R, A, F, H আর D খেয়াল করেছিলেন?”

“দেখেছি, কিন্তু কোন অক্ষরগুলো ছিল খেয়াল করিনি।”

“আমি করেছি,” প্রমথ বলল। “আমার মনে হয় একটা A মিসিং।”

“আপনি আমার ভাত মারবেন স্যার।”

এবার আমি ধরতে পারলাম। নিশ্চয় F A R H A D ছিল। একটা হারিয়ে গেছে।

 

এর দুদিন বাদে সকালবেলায় ব্রেকফাস্টে বসে একেনবাবু হাসি-হাসি মুখে দুটো সাদা বল টেবিলে রাখলেন। একটা একটু টোল খাওয়া, অন্যটা বেশ গোল গোলই আছে।

“আরে, এ তো মনে হচ্ছে রায়হানের বল! কোত্থেকে পেলেন এ দুটো?” জিজ্ঞেস করলাম।

“একটা পেলাম লিফটের কোনায়, অন্য দুটো একতলার ল্যান্ডিং-এ।”

“অন্য দুটো? তাহলে তো তিনটে বল থাকার কথা!”

“হ্যাঁ স্যার, এখানে দুটো আর একটা আমার ঘরে আছে।”

“যান, এবার ফেরত দিয়ে আসুন, নাজরিন খুশি হবেন,” প্রমথ বলল। “একটার বদলে তিনটে বল ফেরত পাচ্ছেন। এই না হলে ডিটেকটিভ!”

“ফারহাদ ঠিকই বলেছিলেন,” আমি বললাম। “ছেলেটা বল হারাতে ওস্তাদ।”

“স্যার, এইরকম বল নিয়ে ল্যান্ডিং-এ খেললে হারিয়ে যেতে বাধ্য। আমি নিজেই কতটা লাফায় দেখতে গিয়ে একটা বল প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম। গরু-খোঁজা খুঁজতে হয়েছিল! তবে একটা কথা স্যার…”

“কী?”

“ভাবছি দুটো বল ফেরত দেব। তিনটে নয়।”

“কেন, আরেকটা নিয়ে নিজে খেলবেন?”

“তা নয় স্যার, খুঁজছিলেন তো মোটে একটা বল। তার বদলে দুটো পেলে খুশিই হবেন।”

“অন্যের দ্রব্য না বলে নেওয়া হল চুরি করা! জানেন না?” প্রমথ ধমকাল।

“তা বললে শুনব কেন স্যার। আরেকটা কথাও তো আছে— ‘ফাইন্ডারস কিপারস’… যে খুঁজে পেয়েছে জিনিসটা তার।”

“বেশ,” প্রমথ সতর্ক করল, “আমি কিন্তু নাজরিনকে বলে দেব, আপনি একটা পকেটস্থ করেছেন।”

“আরে না স্যার, আমি কি সত্যিই চুরি করব নাকি! তিন নম্বরটাও দেব।”

 

প্রমথ ল্যাবে চলে যাবার পর আমি আর একেনবাবু একসঙ্গে কলেজ যাব বলে বেরলাম। পথে দোতালায় নেমে নাজরিনদের অ্যাপার্টমেন্টে বেল বাজাতেই নাজরিন দরজা খুললেন।

“ম্যাডাম, এই যে রায়হানের দুটো বল খুঁজে পেয়েছি।”

“একটাই তো হারিয়েছিল, দুটো!” নাজরিন বিস্মিত হয়ে বল দুটো হাতে নিলেন। বলটা একটু উলটে পালটে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বললেন।

“ইউ আর ওয়েলকাম, ম্যাডাম।”

 

অ্যাপার্টমেন্ট থেকে কলেজে যাবার সারাটা পথ একেনবাবু দেখছি কথা বলছেন না।

প্রশ্ন করলে শুধু হ্যাঁ-হুঁ করছেন। মনটা অন্যদিকে।

“কী ভাবছেন?”

“কিছু না স্যার।”

একেনবাবু যদি কিছু না বলতে চান, কিছুই বলবেন না। আমিও আর প্রশ্ন করলাম না।

 

সকালে একটাই ক্লাস ছিল। সেটা শেষ করে আমার অফিসে বসে আছি। এমন সময় হাসি-হাসি মুখে একেনবাবু এসে হাজির।

“কী ব্যাপার?”

একটা খাম হাতে ধরিয়ে বললেন, “দেখুন স্যার।”

ভিতরে ছোট্ট একটা কাচের টুকরো।

“এটা কী?”

“মনে তো হচ্ছে হিরে?”

“হিরে! কোত্থেকে পেলেন?”

এর ভেতর থেকে। বলে পকেট থেকে আধখানা করা সাদা বল দেখালেন। “প্রমথবাবুর ল্যাব থেকে কাটিয়ে এনেছি।”

বলের দুটো টুকরো হাতে নিয়ে দেখি একটার পেছনে লেখা A।

“রায়হানের বল?”

“হ্যাঁ স্যার।”

“আর এই হিরেটা?”

“মনে হয় ইরানের শাহদের রাজকোষ থেকে চুরি যাওয়া জিনিস।”

“কী বলছেন যা-তা!”

“সেটা নাও হতে পারে স্যার, তবে আমার বিশ্বাস এরকম আরও পাঁচটা হিরে নাজরিন ম্যাডামদের বাড়িতে আছে।”

 

পরের ব্যাপারটা সংক্ষেপে বলি। যেটা আমরা কেউই জানতাম না, কয়েকমাস আগে নিউ ইয়র্কের ডায়মন্ড ডিস্ট্রিক্ট থেকে বেশ কিছু দামি হিরে চুরি হয়েছিল। ব্যাপারটা নিয়ে হইচই হয়নি, পুলিশই ব্যাপারটা গোপন রেখেছিল— অনুসন্ধানের সুবিধার জন্য। কিন্তু এই বলের মধ্যে সেই হিরে পাওয়া যাবে, একেনবাবু সেটা জানলেন কী করে?

একেনবাবু বললেন, “কী মুশকিল স্যার, আপনার বই থেকেই তো!”

“আমার বই থেকে?”

“ওই যে ইরানের ইতিহাস পড়লাম। দেখলাম অনেক মণিমাণিক্য ইন্ডিয়া থেকে নাদির শাহ নিয়ে গিয়েছিল। আর রেভল্যুশনের সময়েও কিছু চুরি গিয়েছিল। তার কিছু নিশ্চয় ফারহাদের বাবা সরিয়েছিলেন রেজা পহলবি যখন মিশরে পালান।”

“কিন্তু এগুলো তো সেইসব হিরে নয়!”

“তা নয় স্যার, কিন্তু খটকা লেগেছিল, যখন দেখলাম কতগুলো বল-এ অক্ষর লেখা। এটিজারেতে অক্ষর-লেখা বল ছিল পাঁচটা, কিন্তু প্রমথবাবু ঠিকই ধরতে পারলেন সংখ্যায় হবে ছ-টা। বোঝাই যায়, ওগুলোকে কোনও কারণে অন্যগুলোর থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু যখন দেখলাম একটা বল হারিয়েছে দেখে নাজরিন ম্যাডাম ভীষণ উদ্বিগ্ন, তখন সন্দেহ হল নিশ্চয় সেই অক্ষর-অলা বলটা হারিয়েছে বলেই। সেটাকে খুঁজে পেলাম, সেইসঙ্গে আরও দুটো। ইচ্ছে করেই অক্ষর-অলা বলাটা ফেরত না দিয়ে অন্য দুটো দিলাম। আপনি তো নিজেই দেখলেন সেই বল দুটো ফেরত পেয়ে খুব যে উৎফুল্ল হলেন বলে মনে হল না… দায়সারা ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বললেন। কেন স্যার, সেটাই ভাবছিলাম। এদিকে প্রমথবাবু দেখিয়েছেন বলগুলো বাড়িতে বানানো কিছুমাত্র কঠিন ব্যাপার নয়। সেক্ষেত্রে ছোটো সাইজের কিছু ওর মধ্যে লুকিয়ে রাখা যেতেই পারে। ছোটোখাটো দামি জিনিসের মধ্যে হিরে নিশ্চয় পড়ে। তাই এসেই প্রমথবাবুর ল্যাবে গিয়ে সাবধানে বলটা দু-টুকরো করি। প্রথমে ভেবেছিলাম ইরানের চুরি যাওয়া হিরে… ফারহাদ সাহেবের ইরানিয়ান কানেকশন-এর জন্য। রাজকোষ থেকে কিছু চুরি হলে ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের পক্ষে সেটা জানা সম্ভব নয়… আমেরিকার সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক তো আদায় কাঁচকলায়। তবু ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টকে ফোন করি, ঠিক কী করা উচিত জানার জন্য। তখনই ডায়মন্ড ডিস্ট্রিক্টে চুরির খবরটা শুনি।”

“আপনার কি ধারণা ফারহাদ আর নাজরিন এই চুরির সঙ্গে জড়িত?”

“অবশ্যই স্যার। একটা ইরানিয়ান গ্যাং ইস্ট-কোস্টে আস্তানা গেড়েছে। একাধিক জায়গায় ওরা বার্গলারি করছে।”

“দুটো প্রশ্ন। আমাদের খেতে ডেকে ইরানের শাহদের সঙ্গে ওঁর পারিবারের কানেকশনের গল্পটা ফাঁদলেন কেন? আর বল খুঁজে দেবার কথাই বা বললেন কেন?”

“আমার ধারণা, হারানো বলটা খোঁজার জন্য অনেকের সাহায্য কাজে লাগানো। বিশেষ করে নাজরিম ম্যাডামের মতো সুন্দরী আর রয়্যাল ফ্যামিলির কানেকশন দেখলে আমরা সবাই একটু বেশি উৎসাহে বলটা খুঁজব। পাছে আমরা ভাবি, আরও তো অনেক বল আছে, সেখান থেকে একটা দিলে তো হয়, তাই ম্যাডাম শিশু-শিক্ষার ব্যাপারটার জুড়ে দিলেন। এরপর স্যার, আমরা কি আর না খুঁজে পারব।”

“এবার কী হবে?”

পুলিশ ওয়ারেন্ট নিয়ে চলে গেছে ওঁদের অ্যাপার্টমেন্ট সার্চ করতে। আমরা পৌঁছতে পৌঁছতেই সেই কাজটা বোধ হয় শেষ হয়ে যাবে।

 

ছবি – রোকু

Leave a Reply

Your email address will not be published.