রবীন্দ্রনাথের জাপান-যাত্রী মণিমেখলা মাইতি

১৩২৩ বঙ্গাব্দর ২ বৈশাখ অর্থাৎ ১৯১৬-র ১৫ এপ্রিল শনিবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক চিঠিতে কাদম্বিনী দত্তকে লিখলেন— “আমি কাল রবিবারে কলকাতা যাব। সেখান থেকে শীঘ্রই সিংহলের পথে জাপান হয়ে আমেরিকা যাবার আয়োজন করছি।” এই চিঠি আজ থেকে প্রায় একশ বছরেরও আগে লেখা। রবীন্দ্রনাথের প্রথম জাপান-যাত্রা। রবীন্দ্রনাথ ১৯২৪ এবং ১৯২৯ সালেও আবার জাপান গিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯১৬-তে প্রথমবার। ১৯১৩ সাল থেকেই উনি পরিকল্পনা করছিলেন ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলপথে য়ুরোপ থেকে রাশিয়া পেরিয়ে জাপান যাবেন। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে য়ুরোপের পথ বন্ধ হয়ে যায়। অগত্যা এই দীর্ঘ জাহাজপথেই জাপানযাত্রার ব্যবস্থা। তখন জাহাজ ছাড়া আর অন্যভাবে যাওয়ার উপায় ছিল না।

কলকাতা এলেন, কিন্তু সহজে জাহাজ পাওয়া যাচ্ছিল না। একটা জাহাজ ছিল, যেটা ১০ জুন ছাড়ত। তখন সমুদ্র অশান্ত, যাওয়া বিপজ্জনক। শেষ অবধি জাপানি কনসালের চেষ্টায় একটা জাহাজ পাওয়া গেল যেটা ২৯ এপ্রিল, ১৯১৬-তে কলকাতা থেকে ছাড়বে। সেটি একটি ছোট মালবাহী জাহাজ। নাম ‘তোসামারু’। অল্পসংখ্যক যাত্রী নেওয়ার ক্ষমতা ছিল সেই জাহাজটির। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গী হলেন তাঁর দুই ইংরেজ বন্ধু পিয়ার্সন, এন্ড্রুজ এবং রাণী চন্দের বড়দা মুকুল দে যাঁকে রবীন্দ্রনাথ ‘মুকুল’ বলে সম্বোধন করতেন। মুকুল দে অবশ্য জাহাজের ডেকের প্যাসেঞ্জার হিসেবে যান। তখন জাহাজের প্রথম শ্রেণির ভাড়া ছিল ২৫৫ টাকা আর ডেকের ভাড়া ৫৫ টাকা। একটু প্রসঙ্গান্তরে যাই। Stephen Hay বলেছেন, “The ship on which he sailed for Japan had been outfitted two years earlier by members of this group (‘Bengal Revolutionaries’) in a complex plot to smuggle arms into India.” কথিত আছে, রবীন্দ্রনাথের জাপান-যাত্রাকে বিপ্লবী রাসবিহারী বসু কাজে লাগিয়েছিলেন। ১৯১৫ সালে তাঁর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে পি এন ঠাকুর নাম নেন এবং নিজেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দিয়ে রবীন্দ্রনাথের জাপান-যাত্রার সুব্যবস্থা করার অজুহাতে জাপান যাওয়ার পাসপোর্ট বাগিয়ে জাপান চলে যান।

রবীন্দ্রনাথ ১ মে তোসামারু জাহাজে চড়ে বসলেন। কিন্তু জাহাজ ছাড়ল না। জাহাজের কিছু মালপত্র পৌঁছায়নি বলে জাহাজ পরের দিনও ছাড়ল না। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ভ্রমণকাহিনি ‘জাপান-যাত্রী’তে লিখেছেন— “বাড়ির লোকেরা সকলেই জাহাজ চড়িয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে গেল… কিন্তু জাহাজ চলল না।… যারা থাকবার তারাই গেল, আর যেটা চলবার সেটাই স্হির হয়ে রইল; বাড়ি গেল সরে, আর তরী রইল দাঁড়িয়ে।” মুকুল দে তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার কথা’য় লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথ মুকুলকে নিয়ে সকালে জোড়াসাঁকোতে ফিরে যান। সারাদিন কাটিয়ে সন্ধেবেলা আবার খিদিরপুরে জাহাজে ফেরেন। শেষমেশ তোসামারু জাহাজটি জাপানের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ১৯১৬-র ৩ মে বুধবার।

কবি আগে চারবার জাহাজে চড়েছেন। সেগুলো ছিল সব য়ুরোপীয় জাহাজ। এ জাহাজের আদবকায়দা পুরোই জাপানি। কবি প্রথম থেকেই জাপানের আস্বাদ পাচ্ছেন এই জাহাজে। যেমন জাহাজের ক্যাপ্টেনের কথা ধরা যাক। যাত্রীদের সঙ্গে মেলামেশায় কোনও কমতি না থাকলেও নিয়মের কোনও নড়চড় হতে দেন না। কবির সহযাত্রী ইংরেজ বন্ধু ডেকের ওপরে কেবিন থেকে গদি আনতে চাইলেন। সম্মতি পেলেন না। ব্রেকফাস্টের সময় তাঁর টেবিলে পাখার বন্দোবস্ত ছিল না বলে তিনি কবির টেবিলে জায়গা ফাঁকা পেয়ে বসতে চাইলেন। কিন্তু সম্মতি পেলেন না। কবির টেবিল খালি পড়েই থাকল। নিয়মের নড়চড় হল না। রাতে কবি ডেকেই শোওয়ার বন্দোবস্ত করলেন। কিন্তু ডেকে শুয়ে কবির মনে হল— “এ কেমনতরো বাইরে? জাহাজের মাস্তুলে মাস্তুলে আকাশটা যেন ভীষ্মের মত শরশয্যায় শুয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করছে। কোথাও শূন্যরাজ্যের ফাঁকা নেই।”

পরের দিন অর্থাৎ ৪ মে বিকেলে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পাইলট নেমে গেলেন। “এর কিছু আগে থাকতেই সমুদ্রের রূপ দেখা দিয়েছে। তার কূলের বেড়ি খসে গেছে। কিন্তু, এখনো তার মাটির রঙ ঘোচে নি। পৃথিবীর চেয়ে আকাশের সঙ্গেই যে তার আত্মীয়তা বেশি,… কেবল দেখা গেল জলে আকাশে এক দিগন্তের মালাবদল করেছে।” জাহাজের নিচের তলার ডেকে বেশ কয়েকজন ডেক প্যাসেঞ্জার আছে। তাদের মধ্যে কিছু হিন্দু আর কিছু মুসলমান। মাদ্রাজিদের অধিকাংশ যাবে রেঙ্গুন। ক্যাপ্টেন জানিয়েছেন সন্ধেবেলা ঝড় হবে কারণ ব্যারোমিটারের পারদ নামছে। কিন্তু সূর্য যখন অস্ত গেল আকাশ শান্ত। বাতাসেরও তেমন প্রতাপ নেই। কবি ভাবলেন এ যাত্রায় ঝড়ের ফাঁড়া কেটে গেল।

কবি ডেকের উপরে যখন বিছানা করে শুলেন তখন “বাতাসে এবং জলে বেশ একটা কবির লড়াই চলছে; একদিকে সোঁ সোঁ শব্দে তান লাগিয়েছে, আর একদিকে ছলছল শব্দে জবাব দিচ্ছে, কিন্তু ঝড়ের পালা বলে মনে হল না।”

ঝড় এল সকালে। কবি লিখছেন— “রাগী মানুষ কথা না কইতে পারলে যেমন ফুলে ফুলে ওঠে, সকাল-বেলাকার মেঘগুলোকে তেমনি বোধ হল। বাতাস কেবলই শ ষ স, এবং জল কেবলই বাকি অন্ত্যস্হ বর্ণ য র ল ব হ নিয়ে চণ্ডীপাঠ বাধিয়ে দিলে, আর মেঘগুলো জটা দুলিয়ে ভ্রূকুটি করে বেড়াতে লাগল। অবশেষে মেঘের বাণী জলধারায় নেবে পড়ল।” জাহাজের কাজ যেমনকে তেমন চলছে। প্রাতরাশ হল নির্বিঘ্নে। ক্যাপ্টেন উদ্বেগহীন। কবি ভাবলেন কেবিনের মধ্যে থাকলে ঝুমঝুমির ভেতরের নুড়িগুলোর মতো নাড়া খেতে হবে, তাই শাল কম্বল মুড়ি দিয়ে ডেকের ওপর বসে ঝড়ের সঙ্গে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রসঙ্গত প্রথমবার কবি যখন য়ুরোপ যান, টানা প্রায় আটদিন সমুদ্রপীড়ার কারণে জাহাজের কেবিনেই পড়েছিলেন। ওঠার ক্ষমতা ছিল না।

ঝড় বেড়ে চলল। পশ্চিম দিক থেকে ঝাপটা আসছে জোরে। মেঘের সঙ্গে ঢেউয়ের কোনও তফাত নেই। নীল রঙের সমুদ্র তখন ঝাপসা, রঙহীন। জাপানি মাল্লারা হাসিমুখে ছোটাছুটি করছে। কাপ্তেন বারবার আশ্বস্ত করছেন এই বলে— “ছোট ঝড়।” স্টুয়ার্ড এসে কবিকে বোঝালেন জাহাজকে কেমন গতিপথে বদল আনতে হয়েছে। কবির শাল কম্বল ভিজে একশা। বাধ্য হয়ে ক্যাপ্টেনের রুমে আশ্রয় নিলেন। কিন্তু ভেতরে থাকতে মন চাইল না। কবি আবার ডেকে চলে এলেন। জাহাজটি মালবোঝাই বলে ঝড় বিশেষ অসুবিধা করতে পারছে না। ছাপান্ন বছর বয়সি কবির মৃত্যুর কথা মনে হল। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলেন— “চারি দিকেই তো মৃত্যু, দিগন্ত থেকে দিগন্ত পর্যন্ত মৃত্যু; আমার প্রাণ এর মধ্যে এতটুকু। এই অতি ছোটটার উপরেই কি সমস্ত আস্হা রাখব, আর এই এত বড়টাকে কিছু বিশ্বাস করব না?— বড়োর উপরে ভরসা রাখাই ভালো।” ডেকে আর থাকতে পারলেন না কবি। শরীরটা ভালো লাগছে না। অথচ কবির কাছে জাহাজের উপরকার দোলার থেকে ভিতরকার দোলা সহ্য করা শক্ত কারণ এ যেন জুতোর মধ্যে কাঁকর নিয়ে চলার মতো। তার থেকে কাঁকরের উপর চলা বেশি সহজ। সন্ধের সময় ঝড় থামল। ঝড় থামতে দেখা গেল জাহাজের সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অবাক ব্যাপার, ঝড় জাপানি মাঝি মাল্লাদের হাসিতে ভাগ বসাতে পারেনি। একদিন পর রবিবার কবি আকাশে একটি পাখি দেখতে পেলেন। “এই পাখিগুলিই পৃথিবীর বাণী আকাশে বহন করে নিয়ে যায়; আকাশ দেয় তার আলো, পৃথিবী দেয় তার গান।”

 

৭ মে রবিবার ২৪ বৈশাখ তোসামারু রেঙ্গুনে পৌঁছাল। মীরা দেবীকে এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন— “সন্ধ্যার সময় নদীর ঘাটে দেখি লোকারণ্য। আমাদের গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে বন্দে মাতরং জয় রবীন্দ্রনাথ কি জয়, চেঁচাতে চেঁচাতে তিন মাইল রাস্তা তারা ছুটে এল, সহরের দুধারের দোকানে বাজারে সকল লোকে তো অবাক, আমি লজ্জায় মরি। এখানে আছি P C Sen-দের বাড়ি।” এই পি সি সেন হলেন কেশবচন্দ্র সেনের ছোট মেয়ে সুজাতার শ্বশুরমশাই। সুজাতাকে রবীন্দ্রনাথ ছোট থেকে চিনতেন। রেঙ্গুনের রাস্তাঘাট চওড়া, পরিষ্কার, সোজা। বাড়িগুলো তকতকে। রাস্তায় মাদ্রাজি, পাঞ্জাবি, গুজরাটি ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে ব্রহ্মদেশীয় লোকজনকে একান্তই বিদেশী মনে হয়। ইরাবতী নদী বরাবর জাহাজটা যখন রেঙ্গুনের কাছাকাছি আসছিল কবি তখন প্রথম পরিচয় পেয়েছিলেন দেশটির। নদীর তীরে সব বড় বড় কেরোসিন তেলের কারখানা। তাদের বিশাল বিশাল চিমনি আকাশে তুলে কারখানাগুলো যেন চিটপটাং হয়ে শুয়ে বার্মা চুরুট খাচ্ছে। সারি সারি জেটি। কবির ভালো লাগেনি। কারণ নদীর তীরে সারি সারি কারখানা নদী বা শহরের স্বাভাবিক রূপকে খর্ব করে। তাই বাণিজ্যিক রাজধানী কবির পছন্দ হয়নি।

পরের দিন ২৫ বৈশাখ ৮ মে। কবির ছাপান্নতম জন্মদিন। রেঙ্গুনের বিখ্যাত শোয়েডেগঙ প্যাগোডা দেখতে গেলেন সদলে। মন্দিরের মধ্যে ঢুকেই ‘আনন্দের চমক’ লাগে। ধাপে ধাপে চওড়া সিঁড়ি উঠে গেছে। তার উপরে আচ্ছাদন। সিঁড়ির দুই ধারে ব্রহ্মদেশীয় মেয়েরা ফল, ফুল ইত্যাদি পূজার উপাচার বিক্রি করছে। মুসলমান দোকানদাররা বিলিতি মণিহারির দোকান খুলেছে। চারিদিকে মাছ মাংস খাওয়া চলছে। “সংসারের সঙ্গে মন্দিরের ভেদমাত্র নেই, একেবারে মাখামাখি।” কারণ বুদ্ধ বলেছেন— “বাহিরের শাসনে কল্যাণ নেই, অন্তরের ইচ্ছাতেই মুক্তি।” চারিদিক শান্ত। সিঁড়ি বেয়ে কবি উপরে উঠে দেখলেন নানারকমের মন্দির। সেগুলিতে বাচ্চাদের খেলনার মতো ঠাসাঠাসি কারুকাজ। সামঞ্জস্যহীন। কবির ভালো লাগেনি একেবার। ব্রহ্মদেশের পুরুষরা অলস ও আরামপ্রিয়। এখানে পুরুষদের কাজ মেয়েরাই করে। এই রঙিন মেয়েরাই চোখে পড়েছে কবির। অবাধে কাজ করতে পারে বলে মেয়েরা এখানে বেশি বিকশিত। তারা ‘পূর্ণতা ও আত্মপ্রতিষ্ঠা’ লাভ করেছে। প্রকাশের পূর্ণতাই সৌন্দর্য। রেঙ্গুন থেকে প্রতিমাদেবীকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন— “যদি অন্য কোথাও না ঘুরে এখানে কোন বৌদ্ধমঠে ৩/৪ মাস কাটাতে পারতুম অনেক বেশি ভালো লাগত। ঘুরে বেড়ানো স্বপ্ন দেখার মত— তাতে কিছুই দেখা হয় না।”

১২ মে শুক্রবার পিনাঙে পৌঁছলেন কবি। পথে আসার সময় সমুদ্রের মাঝে দূরে দূরে আগাগোড়া গাছে ঢাকা পাহাড় দেখা যাচ্ছিল। ঠিক যেন ‘দানবলোকের প্রকাণ্ড জন্তু তার কোঁকড়া সবুজ রোঁয়া নিয়ে সমুদ্রের ধারে ঝিমোতে ঝিমোতে রোদ পোয়াচ্ছে।’ মুকুলের খুব ইচ্ছে হয়েছিল ওখানে নেমে যায়। কবির কাছে ‘ঐ ইচ্ছেটা হচ্ছে সত্যকার ভ্রমণ করবার ইচ্ছা। অন্য কর্তৃক দেখিয়ে দেওয়ার বন্ধন হতে মুক্ত হয়ে নিজে দেখার ইচ্ছা।’ ধরে বেঁধে দেখা কবির পছন্দ নয়। সূর্যাস্তর সময় জাহাজ পিনাঙ বন্দরে ঠেকল। কবি দূর থেকে দেখলেন জলের সঙ্গে স্হলের মিলন। ধরণী তার দুবাহু মিলে সমুদ্রকে আলিঙ্গন করছে। মেঘের ভিতর দিয়ে নরম আলো পড়ছে নীল পাহাড়গুলিতে। জাহাজ থেকে কবি নামেননি পিনাঙে।

তোসামারু ভেসেই চলেছে। উপরে আকাশ। নিচে সমুদ্র। কবির কাছে এ দুটো যেন মস্ত ‘ভোজের থালা’। মেঘগুলো নানা আকৃতির। প্রকৃতিতে রঙের হরির লুঠ চলছে। কখনও বজ্রবিদ্যুতসহ মুষলধারে বৃষ্টি। জাহাজ চলছে চিন সমুদ্রে। পথে জাহাজ ১৫ মে সিঙ্গাপুরে পৌঁছালে কবি শহরটা এক জাপানি মহিলার অনুরোধে এন্ড্রুজের সঙ্গে ঘুরে, নৈশাহার সেরে রাত দশটা নাগাদ জাহাজে ফিরে আসেন। কিন্তু পরের দিন সিঙ্গাপুরে জাহাজ ছাড়ার সময় একটা বিড়াল জলে পড়ে যায়। তাকে কোনোরকমে বাঁচিয়ে জল থেকে তুলে শুরু হয় হংকং-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা। ২১ মে হংকং পৌঁছানোর কথা থাকলেও বাধ সাধল ঝড়বৃষ্টি। কবি সারারাত বিছানা ডেকের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত টানাটানি করেও বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই পাননি। শেষে বাদলার সঙ্গে লড়াই ফেলে মাঝরাতে ডেকে ওই ঝড়বৃষ্টিতে গেয়ে উঠলেন তাঁরই রচিত ‘শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে’। আরও কয়েকটি গান গাইলেন পরপর। তারপর ডেকে ভিজতে ভিজতে রচনা করলেন নতুন গান ‘ভুবনজোড়া আসনখানি’। পরের দিন সকালেও আকাশ ঝাপসা। হংকং বন্দরের পাহাড়ের গা বেয়ে ঝর্ণা গড়িয়ে পড়ছে। যেন ‘দৈত্যের দল সমুদ্রে ডুব দিয়ে তাদের ভিজে মাথা জলের উপর তুলছে, তাদের জটা বেয়ে, দাড়ি বেয়ে জল ঝরছে।’ হংকংয়ে পৌঁছে কবি শুনলেন জাপানবাসীরা প্রস্তুত হয়ে আছে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য। তাই সাংহাই যাওয়া হবে না। দুদিন জাহাজ হংকং বন্দরে থাকলেও কবি হোটেলে না গিয়ে জাহাজেই থাকা মনস্থির করেন। অবশ্য মুকুল দে তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন একদিন গুরুদেব দড়িটানা ডুলিতে চেপে পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। হংকংয়ে জাহাজে বসে বসে চিনা মজুরদের কাজ দেখে অভিভূত হয়ে যান কবি। লিখলেন— “কাজের এই মূর্তিই চরম মূর্তি, একদিন এরই জয় হবে।”

১৬ জ্যৈষ্ঠ ২৯ মে সোমবার জাহাজ পৌঁছল প্রায় পাঁচদিন পর জাপানের কোবে বন্দরে। পথে বৃষ্টিবাদলের বিরাম ছিল না। এই পাঁচদিনে কবি জাহাজে ‘মালিনী’ নাটকের ইংরাজি অনুবাদ করেন। তাছাড়া জাপান আসার পথে কবি অনুবাদ করেন ‘বিসর্জন’, ‘রাজা ও রাণী’। জাপানের ছোট ছোট দ্বীপগুলো বৃষ্টিতে ঝাপসা। সঙ্গের জাপানি যাত্রী ভোরে কেবিন ছেড়ে ডেকের উপর উঠে এসেছেন ‘জাপানের প্রথম অভ্যর্থনা গ্রহণ করার জন্য।’ কবি দেখছেন নূতনকে, তিনি দেখছেন তাঁর চিরন্তনকে। তোসামারু যখন বন্দরে এসে পৌঁছল, তখন মেঘ কেটে গিয়ে সূর্য উঠেছে। বড় বড় জাপানি নৌকো আকাশে পাল তুলে দিয়েছে। কবির খুব ইচ্ছে হল জাহাজের ডেকে বসে রাজার হালে জাপানে প্রথম প্রবেশটা ভালো করে দেখেন। কবির কপালে সে সুখ সইল না। কবিকে ঘিরে ধরেছে সাংবাদিক আর আলোকচিত্রীরা। কোবে বন্দরে উপস্থিত বিখ্যাত চিত্রকর টাইক্কন, আর এক চিত্রকর কাটসটাক, শান্তিনিকেতনের জুজুৎসু ব্যায়ামের শিক্ষক সানো, পরিব্রাজক কাওয়াগুচি এক্কাই, কিছু প্রবাসী ভারতীয়। বন্দরে প্রবল হট্টগোল, চেঁচামেচি, কবিকে নিয়ে দড়ি টানাটানি। সবাই কবিকে অতিথি হিসেবে চায়। কবির কাছে তখন মানুষের সাইক্লোনের চেয়ে বঙ্গোপসাগরের সাইক্লোন অনেক নিরাপদ। কবি আগের কথা মতো প্রধান গুজরাটি বণিক মোরারজির আতিথ্য গ্রহণ করলেন।

“নতুনকে দেখতে হলে, মনকে একটু বিশেষ করে বাতি জ্বালাতে হয়।” মুকুল কবিকে জিজ্ঞাসা করেছিল দেশে থাকার সময় বই পড়ে, ছবি দেখে জাপানকে যেমন নতুন মনে হয়েছিল জাপানে পৌঁছে কেন দেশটাকে নতুন মনে হচ্ছে না? কবি উত্তরে বলেছিলেন রেঙ্গুন থেকে হংকং হয়ে আসতে আসতে ‘মনের নতুন দেখার আয়োজনটুকু ক্রমে ফুরিয়ে এসেছে।… যখন দেখবার সামগ্রী বেড়ে ওঠে তখন দেখাটাই কমে যায়।’ জানালার ধারে বসে কোবে শহরটিকে দেখতে দেখতে মনে হয়েছে এ লোহার জাপান। লোকের গায়ে য়ুরোপীয় ধাঁচে অফিসের পোশাক। রাস্তায় লোকের ভিড় আছে কিন্তু গোলমাল নেই। এরা চেঁচাতে জানে না। পথে মোটরগাড়ির সামনে ঠেলাগাড়ি এসে পড়লে চালক গালাগালি না করে শান্তভাবে অপেক্ষা করে। কবির কাছে মনে হয় ‘এইটেই জাপানের শক্তির মূল কারণ। জাপানি বাজে চেঁচামেচি ঝগড়াঝাঁটি করে নিজের বলক্ষয় করে না।… শোকে দুঃখে আঘাতে উত্তেজনায়, ওরা নিজেদের সংযত করতে জানে।’ ওরা তাই নিজেদের সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে ওদের তিন লাইনের কবিতা ‘হাইকু’র মতো প্রকাশ করে। জাপানিদের দুটি বিখ্যাত পুরোনো হাইকু হল—

পুরোনো পুকুর,
ব্যাঙের লাফ,
জলের শব্দ।

‘জাপানি পাঠকের মনটা চোখে ভরা।’ একটু ইশারাই যথেষ্ট। যেমন—

পচা ডাল,
একটা কাক,
শরৎকাল।

কবিও জাপানে হাইকু লেখা অভ্যেস করেছিলেন। তিনি অটোগ্রাফ দিতেন হাইকুতে। মিসেস কোরার কাছে পরবর্তীকালে পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের কিছু হাইকু। তার মধ্যে একটি—

হে মহাধীমান,
বিশ্বের অন্তরে
তার স্হান।

 

কবিকে আকৃষ্ট করেছিল জাপানি মেয়েরা। কবি দেখেছিলেন ওদের নিজেদের ভেতরের এক সম্মান আছে। মোরারজির বাড়িতে কবির সবচেয়ে চোখে পড়েছিল জাপানি দাসী। “মাথায় একখানা ফুলে-ওঠা খোঁপা, গালদুটো ফুলো ফুলো, চোখদুটো ছোটো, নাকের একটুখানি অপ্রতুলতা, কাপড় বেশ সুন্দর, পায়ে খড়ের চটি।” এরা যেমন কাজের তেমনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। কবি দেখেছেন সকাল হলেই বাড়িতে বাড়িতে ঘরকন্নার হিল্লোল জাগত। “সে হিল্লোল মেয়েদের হিল্লোল।” আর একটি জিনিস কবিকে খুব আনন্দ দিয়েছিল তা হল জাপানের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। রাস্তাঘাটে সর্বত্র ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। কবির মনে হয়েছে যে কারণে ওরা ফুল ভালোবাসে, সেই কারণেই ওরা শিশু ভালোবাসে কারণ “শিশুর ভালোবাসায় কোন কৃত্রিম মোহ নেই।” জাপানে যে লোক অত্যন্ত গরীব সেও প্রতিদিন নিজের ক্ষিদেকে তুচ্ছ করে এক-আধ পয়সার ফুল না কিনে বাঁচে না। “এদের চোখের ক্ষুধা এদের পেটের ক্ষুধার চেয়ে কম নয়।” জাপানিদের ফুল সাজানো বা ‘ইকেবানা’ কবির মনে ধরেছিল। তিনি লিখছেন— “অন্যত্র নানা ফুল ও পাতাকে ঠেসে একটা তোড়ার মধ্যে বেঁধে ফেলে— ঠিক যেমন করে বারুণীযোগের সময় তৃতীয়শ্রেণীর যাত্রীদের এক গাড়িতে ভরতি করে দেওয়া হয়, তেমনি— কিন্তু এখানে ফুলের প্রতি সে অত্যাচার হবার জো নেই; ওদের জন্যে থার্ডক্লাসের গাড়ি নয়, ওদের জন্যে রিজার্ভ-করা সেলুন। ফুলের সঙ্গে ব্যবহারে এদের না আছে দড়াদড়ি, না আছে ঠেলাঠেলি, না আছে হট্টগোল।”

 

কবিকে চা-পান অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ‘আসাহি সিমবুক’ পত্রিকার মালিক মিস্টার মুরাইয়ামা। চা-পানের অনুষ্ঠান জাপানিদের কাছে ধর্মানুষ্ঠানের মতো। প্রথমে যে বাগানে গিয়ে প্রবেশ করেন সেই বাগান দেখে কবি মুগ্ধ হয়ে যান। “বাগান জিনিসটা যে কী, তা এরা জানে; কতকগুলো কাঁকর ফেলে আর গাছ পুঁতে মাটির উপরে জিওমেট্রি কষাকেই যে বাগান করা বলে না, তা জাপানি-বাগানে ঢুকলেই বোঝা যায়; জাপানি চোখ এবং হাত দুই-ই প্রকৃতির কাছ থেকে সৌন্দর্যের দীক্ষালাভ করেছে, যেমন ওরা দেখতে জানে তেমনি ওরা গড়তে জানে। ছায়াপথ দিয়ে গিয়ে এক জায়গায় গাছের তলায় গর্ত-করা একটা পাথরের মধ্যে স্বচ্ছ জল আছে, সেই জলে আমরা প্রত্যেকে হাত মুখ ধুলুম। তার পরে, একটি ছোট্ট ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে বেঞ্চির উপরে ছোট ছোট গোল গোল খড়ের আসন পেতে দিলে তার উপরে আমরা বসলুম। নিয়ম হচ্ছে এইখানে কিছুকাল নীরব হয়ে বসে থাকতে হয়। গৃহস্বামীর সঙ্গে যাবামাত্রই দেখা হয় না। মনকে শান্ত করে স্হির করবার জন্যে ক্রমে ক্রমে নিমন্ত্রণ ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। আস্তে আস্তে দুটো তিনটে ঘরের মধ্যে বিশ্রাম করতে করতে, শেষে আসল জায়গায় যাওয়া গেল।”

ঘরে কোনও আসবাব নেই অথচ গমগম করছে। দেওয়ালে হয় একটিমাত্র ছবি বা ঘরটিতে একটি মাত্র পাত্র। গৃহস্বামী এসে বললেন যে তিনি চা তৈরি ও পরিবেশনের ভার তাঁর মেয়ের উপরে দিয়েছেন। মুরাইয়ামার মেয়ে এসে নমস্কার করে চা তৈরি করতে লাগল। কবি লিখেছেন— “তাঁর প্রবেশ থেকে আরম্ভ করে চা তৈরির প্রত্যেক অঙ্গ যেন কবিতার ছন্দের মতো। ধোওয়া মোছা, আগুনজ্বালা, চা-দানির ঢাকা খোলা, গরম জলের পাত্র নামানো, পেয়ালায় চা ঢালা, অতিথির সম্মুখে এগিয়ে দেওয়া, সমস্ত এমন সংযম এবং সৌন্দর্যে মণ্ডিত যে, সে না দেখলে বোঝা যায় না।” জাপানের এই সৌন্দর্যবোধ তার একটা সাধনা। জাপানের যেটা শ্রেষ্ঠ প্রকাশ তা অহংকারের নয়। তাই তা মানুষকে আঘাত করে না, মানুষকে আহ্বান করে।

রবীন্দ্রনাথ সদলবলে রবীন্দ্রনাথ ৫ জুন ১৯১৬ অর্থাৎ ২৩ জ্যৈষ্ঠ টোকিও রওনা হলেন ট্রেনে করে। সারা দিনব্যাপী ট্রেন যাত্রায় বিভিন্ন স্টেশনে জাপানি ও ভারতীয়রা কবিকে পুষ্পস্তবক দিয়ে অভিনন্দিত করেন। সিজৌকা স্টেশনে কুড়িজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী তাঁকে অভিনব উপায়ে অভিনন্দন জানান। ২ জুলাই তিনি তাঁর ‘The Spirit of Japan’ ভাষণে বলেন— “I met at a wayside station, some Buddhists priests and devotees. They brought their basket of fruits to me and held their lighted incense before my face, wishing to pay homage to a man who had come from the land of Buddha.” টোকিও স্টেশনে প্রায় কুড়ি হাজার লোক জড়ো হয়েছিল। কবিকে বার বার বিব্রত করেছে এমন জনপ্লাবন। টোকিওতে এসে কবি আতিথ্য গ্রহণ করলেন তাঁর চিত্রকর বন্ধু য়োকোয়ামা টাইক্কানের। তাঁর বাড়িতে এসে কবি জাপানের ‘অন্তরের’ পরিচয় পেলেন।

বাইরে জুতো খুলে রাখতে হল। বাড়ির সমস্ত ঘর মাদুর দিয়ে মোড়া। মাদুরের নিচে খড়ের গদি তাই পায়ের শব্দ হয় না। খুব বিশাল বাড়ি নয়। সবই পরিমিত। ঘরের দেওয়াল, মেঝে সব পরিষ্কার। ঘরে যেটুকু দরকার তার থেকে বেশি কিছু নেই। দেওয়ালে একটি ছবি, ফুলদানিতে ফুল সাজানো। চোখকে কোনও জিনিস আঘাত করে না এখানে। জাপানিদের জীবনযাত্রাও এক শিল্প। কবি পরবর্তীকালে এক মিস্ত্রি নিয়ে গিয়ে জাপানি আসবাব করিয়েছিলেন। এক সকালে তিনি উপলব্ধি করলেন চারিদিকে ছড়াছড়ি, জঞ্জাল, নানা আওয়াজ আমাদের জীবনের ও মনের শক্তিক্ষয় করে। আমরা বুঝতে পারি না। যে সব জিনিস অদরকারি, তারা কিছুই দেয় না আমাদের। কবি লক্ষ করেছেন জাপানিরা ঝগড়া করে না। গালাগালির অভিধানে একটিমাত্র কথা আছে— ‘বোকা’। রাগারাগিও চলে নিস্তব্ধে। জাপানিরা বলেন এটা তাঁরা বৌদ্ধ ধর্মের সংস্পর্শে এসে পেয়েছেন। জাপানিদের মধ্যে প্রবাদ আছে তারা মিশ্র জাতি। খাস মঙ্গোলীয় নয়। আর্যরক্তেরও মিশ্রণ ঘটেছে। যেহেতু এরা মিশ্র, তাই এরা ছাঁচে ঢালা নয়। মনের গতিময়তা ওদের এক বৈশিষ্ট্য, তাই ওরা আধুনিকতাকে গ্রহণ করেছে স্বচ্ছন্দে। তাছাড়া দেশটি যেহেতু ছোট, সমস্ত জাতির মিলনের পক্ষে সুবিধে হয়েছে। চিন বা ভারতবর্ষের মতো বিস্তীর্ণ জায়গায় বৈচিত্র্য এদের বিভক্ত করেনি। কবি যতদিন জাপানে ছিলেন, বারবার অনুভব করেছেন ভারতবর্ষের মধ্যে বাঙালির সঙ্গে জাপানির এক জায়গায় যেন মিল আছে। “আমাদের এই বৃহৎ দেশের মধ্যে বাঙালিই সব প্রথমে নূতনকে গ্রহণ করেছে, এবং এখনো নূতনকে গ্রহণ ও উদ্ভাবন করবার মতো তার চিত্তের নমনীয়তা আছে। তার একটা কারণ, বাঙালির মধ্যে রক্তের অনেক মিশল ঘটেছে।”

কবি প্রায় তিন মাসের কাছাকাছি জাপানে ছিলেন। জাপানের একাধিক শহরে থেকেছেন, বক্তৃতা দিয়েছেন, সম্বর্ধিত হয়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন। ২১ জুলাই তাঁর আমেরিকা যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তিনি যাওয়া পিছিয়ে দেন। ওই সময় তিনি আমেরিকার জন্য তাঁর ভাষণগুলি তৈরি করতে থাকেন। আমেরিকা যাওয়ার জন্য রবীন্দ্রনাথ ‘কানাডামারু’ নামক জাহাজের টিকিট কিনেছিলেন। কিন্তু জাহাজটি কবে ছাড়বে সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। যদিও ২ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ ১৭ ভাদ্র প্রতিমা দেবীকে চিঠিতে লিখেছিলেন ওই দিনই তাঁর আমেরিকা যাওয়ার কথা কিন্তু জাহাজ জাপানের য়োকোহামা বন্দর থেকে আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ৩ সেপ্টেম্বর। বোধ হয় তোসামারুর মতো আগের দিন জাহাজে উঠতে হয়েছিল তাঁকে। কবিকে বিদায় জানাতে বন্দরে উপস্থিত ছিলেন য়োকোয়ামা টাইকান, হারা তোমিতারা প্রমুখ ব্যক্তি। কবি এন্ড্রুজের হাতে জাপানে পাওয়া বহুবিধ উপহার সামগ্রী এবং সংগৃহীত বস্তু ভারতে পাঠিয়ে পিয়ার্সন আর মুকুলকে নিয়ে রওনা হলেন আমেরিকা।

 

অলংকরণ – অভিব্রত সরকার

Leave a Reply

Your email address will not be published.