বাঙালিমাত্রেই আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম শুনেছি, তাঁর কিছু লেখাও অবশ্যই পড়েছি। ছোটবেলায় ‘সহজ পাঠ’ থেকে আরম্ভ করে সকলে তাঁর লেখা গান, নাটক, কবিতা নিয়েই বড় হচ্ছি। তিনি আমাদের আজীবনের সঙ্গী। যে কোনও বয়সের, যে কোনও পরিস্থিতির উপযোগী লেখা আছে তাঁর। কিন্তু তাঁর নাম বললেই যে ঋষিসুলভ, দাড়িগোঁফওলা, আলখাল্লা পরা গম্ভীর মানুষটার কথা মনে পড়ে, আদপে তিনি মোটেই তেমন ছিলেন না! ছিলেন খুব রসিক, মিশুকে, আর শিশু-কিশোরদের তো খুবই বন্ধু!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতা বললেই মনে পড়ে ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির’ অথবা ‘হে মোর চিত্ত, পূণ্যতীর্থে’, আর গান বললেই মনে পড়ে দু-দুটো দেশের জাতীয় সঙ্গীত লিখেছেন তিনি। কিন্তু ‘গলদাচিংড়ি তিংড়িমিংড়ি, লম্বা দাঁড়ায় করতাল, পাকড়াশিদের কাঁকড়াডোবায় মাকড়সাদের হরতাল।’ এটাও যে ওঁরই লেখা, বিশ্বাস হয়? আরও আছে।

‘ক্ষান্তবুড়ির দিদিশাশুড়ির
পাঁচ বোন থাকে কাল্‌নায়,
শাড়িগুলো তারা উনুনে বিছায়,
হাঁড়িগুলো রাখে আল্‌নায়।
কোনো দোষ পাছে ধরে নিন্দুকে
নিজে থাকে তারা লোহাসিন্দুকে,
টাকাকড়িগুলো হাওয়া খাবে ব’লে
রেখে দেয় খোলা জাল্‌নায়—
নুন দিয়ে তারা ছাঁচিপান সাজে,
চুন দেয় তারা ডাল্‌নায়॥

এইরকম অনেক মজাদার লেখা আছে কবিগুরুর, যা পাওয়া যাবে ‘খাপছাড়া’ নামের একটা বইতে। ‘সে’ নামে একটা অদ্ভুত উপভোগ্য উপন্যাস লিখেছেন তিনি। আর লিখেছেন অজস্র মজাদার চিঠিপত্র। ভাঙা হিন্দিতে একটা চিঠি লিখেছিলেন তাঁর এক নাতিকে। আর সেই মেলার মজাদার বর্ণনা তো আছেই!

‘ছোট মেয়েরা এক টুকরো ন্যাকড়া ছিঁড়ে তার চারদিকে পাড় সেলাই করে আমার কাছে এনে বল্লে “এটা রুমাল, এর দাম আট আনা, আপনাকে নিতেই হবে”— বলে সেটা আমার পকেটে পুরে দিলে— এমন ভয়ানক মজা! ওঁদের বাজারে এই রকম শ্রেণীর সব ভয়ানক ভয়ানক মজা হয়ে গেছে— তোমরা যে সব প্রাইজ পেয়েচ সে এর কাছে কোথায় লাগে! তার পরে মজা, মেলা যখন ভেঙে গেল সমস্ত রাত ধরে চেঁচাতে চেঁচাতে বেসুরো গান গাইতে গাইতে দলে দলে লোক আমার শোবার ঘরের ঠিক সামনের রাস্তা দিয়েই যেতে লাগল, মজায় একটুও ঘুম হল না— নীচে যতগুলো কুকুর ছিল সবাই মিলে উর্দ্ধশ্বাসে চেচাতে লাগল, এমন মজা!’

 

অনেক কৌতুক নাটিকা আছে তাঁর লেখা, যেমন ‘ছাত্রের পরীক্ষা’, ‘পেটে ও পিঠে’, যেগুলো এখনো বিভিন্ন মঞ্চে নানান অনুষ্ঠানে অভিনীত হয়, আর দর্শকরা খুবই উপভোগ করেন। তা হলেই বলো, এমন কৌতুক করে যিনি লিখতে পারেন, তিনি মানুষটা কি মজাদার নন?

রবীন্দ্রনাথের জীবনেরও অনেক মজাদার ঘটনা আছে, যেগুলো থেকে বোঝা যায় কত রসিক মানুষ ছিলেন তিনি। নিজেই ছড়া করে বলতেন— ‘কোনো দিন এত বুড়ো হবো নাকো আমি, হাসি তামাশারে যবে কবো ছ্যাবলামি।’ আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে রঙ্গতামাশা করতে খুব ভালবাসতেন তিনি। একবার বেয়াইবাড়িতে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে কবিকে যথারীতি আপ্যায়ন করে একটি গদিমোড়া কেদারায় বসতে দেওয়া হলো। রবীন্দ্রনাথ কেদারার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললেন, “ওহে, এটা সজীব নয় তো?”

চেয়ার আবার সজীব! সবাই ভাবলেন, রবীন্দ্রনাথ এ আবার কী বলছেন! চেয়ার বা কেদারা কাঠের তৈরি, জড় পদার্থ! তা আবার সজীব হয় নাকি?

সবার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে এবার হোঃ হোঃ করে হেসে উঠলেন রবীন্দ্রনাথ। বললেন, “অত ভাববার কী আছে? আমি বলছি— চেয়ারটা সজীব মানে ছারপোকা টারপোকা ভর্তি নয় তো?” এ কথা শুনে এবার সবাই হাসতে লাগলেন।

 

দৈনন্দিন কাজের মধ্যেও তিনি মজা করতেন।

একদিন তাঁরই লেখা ‘বিসর্জন’ নাটকের মহড়া চলছিল জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। নাটকে রঘুপতির ভূমিকায় ছিলেন দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়দার নাতি), আর জয়সিংহ সেজেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। একটা দৃশ্য ছিল এমন, জয়সিংহের মৃতদেহের ওপর আছড়ে পড়বেন শোকার্ত রঘুপতি।

দৃশ্যটার মহড়া চলছিল বারবার। দীনেন্দ্রনাথবাবু ছিলেন স্থূল স্বাস্থ্যের অধিকারী। মহড়ায় বারবার তাঁর ভার বহন করা রবীন্দ্রনাথের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছিল। একবার দীনেন্দ্রনাথ একটু বেকায়দায় রবিঠাকুরের ওপর আছড়ে পড়লেন। রবীন্দ্রনাথ কেঁকিয়ে উঠে বললেন, “ওহে দিনু, মনে করিসনে আমি সত্যি সত্যিই মারা গেছি!”

 

রসিক রবীন্দ্রনাথ প্রকল্প ভট্টাচার্য

 

একবার এক দোলপূর্ণিমার দিনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কবি, নাট্যকার ও গীতিকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাক্ষাৎ ঘটে। তো, পরস্পর নমস্কার বিনিময়ের পর হঠাৎ দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর জামার পকেট থেকে আবির বের করে রবীন্দ্রনাথকে বেশ রঞ্জিত করে দিলেন।

আবিররঞ্জিত রবীন্দ্রনাথ রাগ না করে বরং সহাস্যে বলে উঠেন, “এত দিন জানতাম দ্বিজেন বাবু হাসির গান ও নাটক লিখে সকলের মনোরঞ্জন করে থাকেন। আজ দেখছি শুধু মনোরঞ্জন নয়, দেহরঞ্জনেও দ্বিজেন্দ্রলাল একজন ওস্তাদ।”

শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ একজনকে গল্প করতে করতে বলছিলেন, “একটি লোক আমার কাছে এসে ১০ টাকা ধার নিয়ে গিয়েছিল। নেওয়ার সময় বলেছিল— গুরুদেব, আমি আপনার কাছে চির ঋণী রইলাম।” এ কথা বলে রবীন্দ্রনাথ কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলেন, “লোকটা কিন্তু সত্যবাদী ছিল, সে চির ঋণীই রয়ে গেল। ১০ টাকা সে আর আমাকে ফেরত দিয়ে গেল না।”

তাঁর একটা অভ্যাস ছিল, যখনই তিনি কোনও নাটক বা উপন্যাস লিখতেন, সেটা প্রথম দফা শান্তিনিকেতনে গুণীজন সমাবেশে পড়ে শোনাতেন। কথাশিল্পী শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রায়ই এরকম পাঠের আসরে যোগদান করতেন। তা, একবার আসরে যোগদানকালে বাইরে জুতা রেখে আসায় সেটা চুরি গেলে অতঃপর তিনি জুতা জোড়া কাগজে মুড়ে বগলদাবা করে আসরে আসতে শুরু করে দিলেন।

রবীন্দ্রনাথ এটা টের পেয়ে গেলেন। তাই একদিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে এভাবে আসরে প্রবেশ করতে দেখে তিনি বলে উঠলেন, “শরৎ, তোমার বগলে ওটা কি পাদুকা-পুরাণ?” এ নিয়ে সেদিন প্রচণ্ড হাসাহাসি হয়েছিল।

 

সাহিত্যিক বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়, যাঁর ছদ্মনাম বনফুল, এক সভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তাঁর বক্তৃতা শেষ হলে সবাই তাঁর বলার প্রশংসা করলেন। সভায় উপস্থিত রবীন্দ্রনাথও তাঁর বক্তৃতার প্রশংসা করে বললেন, “একটা কথা আপনারা সবাই ভুলে যাচ্ছেন কেন— বলাই তো ভালোই বক্তৃতা দেবে, ওর নামই যে বলাই। বলাই তো ওর কাজ।” কবিগুরুর মুখে এই কথা শুনে সভায় হাসির রোল উঠল।

পরে একবার সেই বনফুলেরই এক ছোট ভাই বিশ্বভারতীতে ভর্তি হওয়ার জন্য শান্তিনিকেতনে পৌঁছেই কার কাছ থেকে যেন জানলেন, রবীন্দ্রনাথ কানে একটু কম শোনেন। তাই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কবিগুরু যখন বললেন, “কী হে, তুমি কি বলাইয়ের ভাই কানাই নাকি?” তখন বলাইবাবুর ভাই চেঁচিয়ে জবাব দিলেন, “আজ্ঞে না, আমি অরবিন্দ।” রবীন্দ্রনাথ তখন হেসে উঠে বললেন, “না কানাই নয়, এ যে দেখছি একেবারে শানাই।”

মরিস সাহেব ছিলেন শান্তিনিকেতনে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার অধ্যাপক। একা থাকলে তিনি প্রায়ই গুনগুন করে গান গাইতেন। একদিন তিনি তৎকালীন ছাত্র শ্রীপ্রমথনাথ বিশীকে বললেন, “গুরুদেব চিনির ওপর একটি গান লিখেছেন, গানটি বড়ই মিষ্টি।” অতঃপর তিনি গানটি গাইতে লাগলেন, “আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী, তুমি থাকো সিন্ধুপারে…”
“তা চিনির গান তো মিষ্টি হবেই। কিন্তু এই ব্যাখ্যা আপনি কোথায় পেলেন?” প্রমথনাথ বিস্মিত হয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলেন। উত্তরে মরিস সাহেব জানালেন, “কেন, স্বয়ং গুরুদেবই আমাকে বলে দিয়েছেন।”
শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক বিধুশেখর শাস্ত্রীকে রবীন্দ্রনাথ একবার লিখে পাঠালেন, “আগামীকাল বিকেলে আমি আপনাকে আমি দণ্ড দিব।” গুরুদেবের এমন কথায় শাস্ত্রীমশাই তো একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। এমন কী অন্যায় তিনি করেছেন যার জন্য তাঁর দণ্ডপ্রাপ্য? চিন্তিত ও শঙ্কিত শাস্ত্রীমশাই নির্ঘুম রাত কাটিয়ে পরদিন উপস্থিত হলেন কবির কাছে। তখনও তাঁকে বেশ কিছুক্ষণ উৎকণ্ঠার মধ্যেই বসিয়ে রাখেন কবিগুরু। অবশেষে পাশের ঘর থেকে একটি মোটা লাঠি হাতে আবির্ভূত হন রবীন্দ্রনাথ। শাস্ত্রীমশাই তখন ভয়ে কাণ্ডজ্ঞান লুপ্তপ্রায়। তিনি ভাবলেন, সত্যি বুঝি লাঠি তাঁর মাথায় পড়বে। কবি সেটি বাড়িয়ে ধরে বললেন, “এই নিন আপনার দণ্ড! সেদিন যে এখানে ফেলে গেছেন, তা একদম ভুলে গেছেন আপনি!”

একদিন গুরুদেব বিকেলে ছেলেমেয়েদের নিয়ে নৃত্যনাট্যের রিহার্সাল করাচ্ছেন। একজন এসে বললেন, “গুরুদেব চা খাবেন?” রবীন্দ্রনাথ বললেন, “আমি না-চা’র দলে।” সেই ব্যক্তি বুঝলেন রবীন্দ্রনাথের রসিকতা, ভাবলেন গুরুদেবকে ইংরেজিতে প্রশ্ন করে জব্দ করবেন। তিনি বললেন, “Won’t you have tea?” রবীন্দ্রনাথ তেমনই মুচকি হেসে বললেন, “আমি no-tea’র (নটির) দলে।”

 

নিজের সৃষ্টির ব্যাপারে বরাবরই সচেতন ছিলেন তিনি। এক সভা শেষে ফিরবার পথে কবিগুরু চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে বললেন, “দেখলে চারু আমার প্রায়শ্চিত্ত । আমি না হয় গোটা কয়েক গান কবিতা লিখে অপরাধ করেছি। তাই বলে আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে এ রকম যন্ত্রণা দেওয়া কি ভদ্রতা সম্মত? গান হলো, কিন্তু দুজনে প্রাণপণ শক্তিতে পাল্লা দিতে লাগলেন যে, কে কত বেতালা বাজাতে পারেন আর বেসুরো গাইতে পারেন! গান যায় যদি এ পথে তো বাজনা চলে তার উল্টো পথে। গায়ক-বাদকের এমন স্বাতন্ত্র্য রক্ষার চেষ্টা আমি আর কস্মিনকালেও দেখিনি। তারপর ওই একরত্তি মেয়ে, তাকে দিয়ে নাকি সুরে আমাকে শুনিয়ে না দিলেও আমার জানা ছিল যে, তঁবু মঁরিতে হঁবে।”

বলা হয়, প্রকৃত রসিক তিনিই, যিনি নিজেকে নিয়েও রসিকতা করতে ছাড়েন না। এই ব্যপারেও কবিগুরু ছিলেন প্রখ্যাত। একদিন তিনি এক সঙ্গীতের আসরে নিমন্ত্রিত হয়ে এসেছেন। তখন আসরে সঙ্গীত পরিবেশন করছেন বিখ্যাত ধ্রুপদী গানের শিল্পী গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। কবি তাঁর গান শুনে মুগ্ধ। গোপেশ্বরের গাওয়া শেষ হলে উদ্যোক্তারা রবীন্দ্রনাথের কাছে এসে অনুরোধ করলেন, “গুরুদেব, এবার আপনাকে গান গাইতে হবে।” সেদিনের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ শ্রোতা হিসেবেই উপস্থিত ছিলেন। উদ্যোক্তাদের অনুরোধে তিনি হাসতে হাসতে বললেন, “বুঝেছি, বুঝেছি, গোপেশ্বরের পর এবার দাড়িশ্বরের পালা।” রবীন্দ্রনাথের মুখে এই কথা শুনে আসরে হাসির রোল উঠল।

জীবনের শেষ দিকে এসে রবীন্দ্রনাথ একটু সামনের দিকে ঝুঁকে উবু হয়ে লিখতেন। একদিন তাঁকে ওভাবে উবু হয়ে লিখতে দেখে তাঁর এক শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁকে বলল, “আপনার নিশ্চয় ওভাবে উপুড় হয়ে লিখতে কষ্ট হচ্ছে। বাজারে এখন এ রকম অনেক চেয়ার আছে যেগুলোতে আপনি হেলান দিয়ে বেশ আয়েশের সঙ্গে লিখতে পারেন। ও রকম একটা আনিয়ে নিলেই তো পারেন।” লোকটার দিকে খানিকক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ জবাব দিলেন, “তা তো পারি। তবে কি জানো, এখন উপুড় হয়ে না লিখলে কি আর লেখা বেরোয়। পাত্রের জল কমে তলায় ঠেকলে একটু উপুড় তো করতেই হয়!”

মহাপুরুষ আমরা তাঁদেরই বলি, যাঁদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত থেকেই কিছু না কিছু শেখার থাকে। যখন তিনি ভীষণ অসুস্থ, গাড়ি করে বাড়ি নিয়ে আসা হচ্ছে, আর উঁচু-নিচু রাস্তায় গাড়ির ঝাঁকুনিতে যন্তণায় নীল হয়ে যাচ্ছেন তিনি। চালকের নাম ছিল সুমন্ত্র, তিনি লজ্জায় জানতে চাইলেন, “গুরুদেব, আপনার কি খুব কষ্ট হচ্ছে?” ওই যন্ত্রণার মধ্যেও গুরুদেব উত্তর দিলেন, “সুমন্ত্র যার সারথি, তার কি কোনও কষ্ট হতে পারে!”

 

আরও অনেক মহাপুরুষের মতোই এই রসিকতাবোধ ছিল কবিগুরুর স্বভাবজাত, এবং এর জন্যই তিনি জীবনের চরম দুঃখ, ভয়ানক ব্যর্থতা এবং অজস্র অপ্রাপ্তি ভুলে থাকতে পেরেছিলেন। কেবল তাঁর পাণ্ডিত্য এবং জ্ঞানের জন্যই নয়, এই কৌতুকপ্রিয়তার জন্যই তিনি দেশে-বিদেশে সব বয়সের সকলের মন জয় করতে পেরেছিলেন, এবং তাঁর প্রয়াণের এত বছর পরেও আমরা তাঁকে ভুলিনি! এমন প্রতিভাবান হয়েও কীভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে তাঁদের একজন হয়ে থাকা যায়, রবীন্দ্রনাথের জীবন থেকে এটা সত্যিই শেখার।

 

অলংকরণ – সুমিত রায়

Leave a Reply

Your email address will not be published.