রবিবার সকাল। বাবা উঠোনে বসে সাইকেল মুছছে। সাইকেলটা মাথা নিচের দিকে। পা, মানে চাকা উপরের দিকে করে উলটে রাখা। দেখে মনে হয় একখানা গুবরে পোকা উলটে গেছে। চিৎ হতে পারছে না। হাত-পা ছুঁড়ছে। তার পাশে একটা ছোট টুলের ওপর বাবা অতি কষ্টে পা মুড়ে বসে আছে। ভুঁড়ির জন্য পা বেশিক্ষণ মুড়ে থাকছে না। মাঝে মাঝেই ছিটকে খুলে যাচ্ছে। বাবা তখন একরকম ঘোঁতঘোঁত আওয়াজ করছে। বাবার সামনে ন্যাকড়া, সরু মুখের তেলের কৌটো, জলের বালতি–মগ— সব ছড়ানো। বাবা সাইকেলের চাকাগুলোকে আস্তে আস্তে একহাতে স্পোক ধরে ধরে ঘোরাচ্ছে আর চাকার গোড়ায় অল্প অল্প তেল দিচ্ছে। তেল দেওয়া হয়ে গেলে চাকাটা বোঁ করে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। তারপর হঠাৎ একপা দিয়ে ব্রেকটা দিচ্ছে চেপে। বনবন করে ঘোরা চাকাটা ঘ্যাঁচ করে থেমে যাচ্ছে।
বাবা যখন সাইকেল মোছে, পুপু বাবার সঙ্গেই থাকে। ধুলোভর্তি সাইকেলটা আস্তে আস্তে ঝকঝকে হয়ে ওঠে। উলটানো চাকা কেমন বোঁ করে ঘোরে। আর সবচেয়ে মজা হচ্ছে হাত দিয়ে প্যাডেল ঘোরানো। সোজা সাইকেলকে স্ট্যান্ডের ওপর তুললে চাকাটা মাটির ওপর খানিকটা উঠে যায়। তখন হাত দিয়ে প্যাডেল ঘোরানোই যায়। কিন্তু সেটা করতে গেলে একহাতে অত্তবড় সাইকেলটাকে ব্যালেন্স করে ধরে রাখতে হবে। পড়ে গেলেই গেল। তার ওপর ওরকম করতে গেলেই কোথাও না কোথাও থেকে কেউ না কেউ দেখে ফেলবেই। আর অমনি চেঁচিয়ে উঠবে, “পুপু, অমনি করে না। সাইকেল গায়ের ওপর পড়ে যাবে। সাইকেলের চেন পড়ে যাবে।” কিন্তু যখন সাইকেল উলটো করে শোয়ানো থাকে, যতোই হাত দিয়ে প্যাডেল ঘোরাও, কেউ কিচ্ছুটি বলবে না।
বাবাও সাইকেল পরিস্কার করার সময় ‘পুপু কই, পুপু কই’ করে। পুপু পাশে বসে থাকে। লাফিয়ে বেড়ায়। এটা কী, ওটা কেন জিজ্ঞেস করে। বাবার সাইকেলটা মোছা হয়ে গেলে পুপু নিজের টোবু সাইকেলটা আর নতুন সাইকেলটা নিয়ে আসে। টোবুটা অনেক পুরোনো। কত পুরোনো ওর মনে নেই। মায়ের কাছে ছবি আছে। ছোট্ট পুপু টোবুটায় বসে আছে। পেছনে মা ওর পিঠ ধরে আছে। নতুন সাইকেলটা ও গতবছর জন্মদিনে পেয়েছে। নতুন বলে ওটার আদরও বেশি। পুপু ওটাকে মাঝে মাঝেই মোছে। যখনই রাস্তায় নিয়ে বেরোয়, সাবধানে চালায়। শুধু নতুন বলে না। এটার কাছে টোবুটা কিছুই না। এটা কত উঁচু! হ্যান্ডেলের সামনে একখানা ঝুড়িও আছে। চাকাগুলো বড় কালো আর গোল। সে চাকায় আবার বড়দের সাইকেলের চাকার মতো পাম্প দিয়ে হাওয়া ভরতে হয়! বাবা যেমন নিজের সাইকেলটা যতীনকাকুর দোকানে নিয়ে যায় পাম্প করাতে, মাঝে মাঝে পুপুর সাইকেলটাও নিয়ে যায়। যতীনকাকুকে বলে, ছেলের সাইকেলটায় একটুখানি হাওয়া ভরে দাও দেখি। পুপুর মনে হয়, প্রতিবার পাম্প করার সাথে সাথে নিজের বুকটাও একটু একটু করে ফুলছে, বড় হচ্ছে। তো, নিজের সাইকেলটা মোছা হয়ে গেলে বাবা পুপুর নতুন সাইকেলটা নিয়ে পড়ে। ন্যাকড়া দিয়ে মোছে আর পুপুকে একসুরে বকে যায়, কী যে করিস না! একটামাত্র সাইকেল, তার এই অবস্থা! ঝাড়লে কিলোখানেক ধুলো বেরোবে। চেনে তেল দেওয়া নেই! ক্যাঁচক্যাঁচ করছে প্যাডেল ঘোরালে। তেল দেওয়া শিখিয়ে দিয়েছিলাম তো! তাহলে…
কিন্তু আজ বাবার কাছে থাকলে চলবে না। ওরা ওদিকে একা একা কী করছে কে জানে! পুপু সকালবেলা দুধ-রুটি-কলা চটকে খেয়েই বেরিয়ে পড়েছে। রবিবার বলে কেউ সেরকম খেয়ালও করেনি। কাল সন্ধে হওয়ার আগে ও আর পাপাইদাদা একখানা বস্তা পেতে রেখে এসেছে ওদের জন্য। বস্তাটা পাপাইদাদাই ওর বাড়ি থেকে এনেছিল। সাথে একখান কোনাভাঙা অ্যালুমিনিয়ামের বাটিতে করে জল। পুপু কী আনবে ভেবে পাচ্ছিল না। কী-ই বা ও আনতে পারে বাড়ি থেকে? বাড়িতে সবাই সবসময় ওর দিকে তাকিয়ে বসে আছে। পুপু কোথায় গেল, পুপু কী করছে? পাপাইদাদা কেমন যখন ইচ্ছে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। বেরিয়ে আসে আর পুপুদের শোবার ঘরের মাথার কাছে যে জানলাটা আছে, সেখান দিয়ে উঁকি মারে, আর ফিসফিস করে ডাকে। আর পুপুকে দেখো, বিকেল চারটের আগে বাড়ির বাইরে পা দিয়ে দেখুক দেখি, মা ঘুমিয়ে পড়লেও, ঘুমের মধ্যেই চেঁচাবে, পুপু যাস না। আর বাবা অফিস থেকে ফিরে পাখা দিয়ে পিঠ চুলকোতে চুলকোতে বলবে, পুপুল, আজ দুপুরবেলাতেই খেলতে চলে গেছিলি? কী করে জানতে পারে কে জানে!
সক্কালবেলা রান্নাঘরে মেলা ভিড়। রান্নার পিসি গ্যাসের ওপর কড়াই চাপিয়ে তার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে রান্না করছে। মা তাকে খুব ব্যস্ত হয়ে কী যেন বলেই যাচ্ছে বলেই যাচ্ছে। বিনিপিসি মস্তবড় এক বঁটি নিয়ে ইয়া গোবদা গোবদা সব তরিতরকারি, লাউ কুমড়ো, গোছা গোছা শাক— সব ঘ্যাঁচ-ঘ্যাঁচ করে কেটে কুচিকুচি করছে। আর একটা থালায় উঁচু পাহাড়ের মতো ঢিবি করে রাখছে। রান্নার গ্যাসের পাশে জানলার ওদিক করে মাছ কুটে থালায় রাখা আছে। জানলার ওপাশে পাঁচিল। পাঁচিলের ওপর ন্যাকাবেড়াল আর একটা কাক পাশাপাশি বসে মাছগুলোর ওপর নজর রাখছে আর নিজেদের মধ্যে কিছু একটা বলাবলি করছে। পুপু আর একটু বড় হলেই ওদের কথা বুঝতে পারবে। তবে এখনও কিছু কিছু যে বুঝতে পারে না এমন নয়। নিশ্চই পারে। নয়তো কাল সন্ধেবেলা ওদের কুঁইকুঁই শুনে কী করে বুঝতে পারল যে ওরা বিস্কুটই খেতে চাইছে!
আর সেই জন্যেই আজ সকাল থেকে রান্নাঘরের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। ওদের তিনজনের অন্তত ছ-খানা বিস্কুট তো লাগবেই! বিনিপিসি সকালবেলা হরলিক্সের সাথে দুখানা বিস্কুট দিয়েছিল। পুপু সেটাকে পকেটে ভরে আরও দুখানা চাইবে ভেবেছিল। কিন্তু যতক্ষণ না ওর খাওয়া হয়, বিনিপিসি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকল। ওর খাওয়া হলে গ্লাস-ট্রে নিয়ে তবেই গেল। পুপুকেও বিস্কুট দুখানা হরলিক্সে ডুবিয়ে ডুবিয়ে খেয়ে নিতে হল। দাদুভাই অন্যান্যদিন বাইরের বারান্দায় বসে পেপার পড়তে পড়তে বা কেউ এলে তার সাথে কথা বলতে বলতে চা খেয়ে নেয়। বিস্কুট পড়েই থাকে প্লেটে। আজ সেখানে একটা গুঁড়ো পর্যন্ত পড়ে নেই বিস্কুটের। প্লেট দেখে পুপুর মনে হল, ও যেভাবে ক্রিম বিস্কুটের ভেতরের ক্রিমটা আগে চেটে একেবারে সাফ করে খেয়ে নেয়, দাদুভাইও সেইভাবে প্লেটটাকে চেটেপুটে সাফ করে বসে আছে। পুপুর রান্নাঘরের সামনে ঘুরঘুর না করে উপায় কী!
কাল বিকেলে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলায় পাপাইদাদা ওর কাছে দুবার হেরে গেল। হেরে গিয়ে বলল, “বাজে খেলা। ছোঁয়াছুঁয়ি কেউ খেলে? আয় আমরা লুকোচুরি খেলি।”
মা পুপুকে লুকোচুরি খেলতে বারণ করেছে। বিকেলে ও আর পাপাইদাদা পাড়ার পাশের মাঠে খেলে। লুকোচুরি খেলতে আড়াল লাগে। মাঠের মধ্যে আড়াল কোথায়? কয়েকদিন আগে ও পাপাইদাদার সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে খেলতে বসাকবাড়ির পেছনে ড্রেনের ধারে লুকিয়েছিল। পাপাইদাদা ওকে খুঁজে পায়নি। কিন্তু ওর হাফপ্যান্টের নিচে গোটা পায়ে এমন দাগড়া দাগড়া করে মশা কামড়েছিল, যে বাড়ি ফিরে মা ওর পিঠের ওপর এক বাড়ি বসিয়ে দেয় আর কী! সেই থেকে লুকোচুরি, গাধাপিট্টু সব খেলা বারণ। গাধাপিট্টুটা অবশ্য আগেই বারণ ছিল।
পাপাইদাদা যখন লুকোচুরি খেলার কথা বলল, পুপু খানিক দোটানায় পড়ে গেল। একবার ভাবল, মা বারণ করেছে তো কী হয়েছে! লুকোচুরি খেলার মতো মজা কোনও খেলায় আছে না কি! সঙ্গে সঙ্গেই মনে হল, মা বারণ করেছে। মা-র বারণ না শুনলে কী সব ভয়ানক ব্যাপার হয়ে যায়! কী হয়ে যায় পুপু জানে না। কিন্তু সে বড় ভয়ানক।
কী করবে কী করবে না ভেবে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে আর পা চুলকোচ্ছে পুপু। পাপাইদাদা এর মধ্যে বলা নেই কওয়া নেই কোথায় গিয়ে লুকিয়ে পড়েছে। পুপু আর কী করে! বাধ্য হয়েই মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে ওয়ান-টু-থ্রি গুনতে লেগেছে। দাঁড়াও না, একবার তোমাকে খুঁজে বের করি, তোমার মাকে না বলে দি! কেন, আর কোনও খেলা নেই, কুমির-ডাঙা, বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ, কত কী খেলা আছে! তা না তোমার লুকোচুরিই খেলা চাই। আজ যদি মা পুপুকে বকে? যদি বলে, পুপু, আমি বারণ করেছিলাম না, তবু তুমি লুকোচুরি খেললে কেন? মা রেগে গেলেই পুপুকে তুমি তুমি বলে। আর মাঠে পুপু কী খেলছে, মা তো জানতে পারবেই। রোজই জানতে পেরে যায় কীভাবে যেন।
পুপুর রাগ হচ্ছে। দাঁড়াও, কোথায় আর লুকোবে! ওই তো, নীল-সাদা বাড়িটার পাশের ড্রেন দিয়ে হেঁটে গিয়ে পেছনের পুকুরের ধারে ঝোপগুলোর আড়ালে; নাহলে বঙ্কুকাকুদের উঁচু বারান্দায় পায়রার বাক্সগুলোর পেছনে। আর কোথায় যাবে? এসব ভাবছে আর মাঠের মাঝখানে চোখ বন্ধ করে ওয়ান-টু গুনছে পুপু। থ্রি সিক্স থারটি সিক্স থেকে থ্রি সেভেন থারটি সেভেনে যেতে না যেতে পুপু শুনল, পাপাইদাদা খুব ব্যস্ত হয়ে ডাকতে ডাকতে ওর দিকে ছুটে আসছে, “পুপু, ওই পুপু, দেখে যা।”
গোনা শেষ হওয়ার আগেই পাপাইদাদাকে আসতে দেখে পুপু গোনাগুনি ভুলে উলটে ওকেই ধাপ্পা করে দিল। পাপাইদাদা ওসব ধাপ্পা-টাপ্পার পরোয়া না করে ওর হাত ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে গেল। নীল-সাদা বাড়িটার পাশে যে সিমেন্টের একদিক খোলা ডাস্টবিন, তার মধ্যে থেকে কুঁইকুঁই আওয়াজ আসছে। পুপু উঁকি মেরে দেখল, তিনটে। একটা কালো, তার একটা কান আবার সাদা, একটা লাল-সাদা ছোপ ছোপ, আর একটা পুরোটাই ঘিয়ে— একসাথে দলা পাকিয়ে আছে। এ-ওকে চেটে দিচ্ছে। ওদের দিকে তাকাচ্ছে আর লেজ নাড়ছে। কুকুরছানা।
আজ সকালবেলা ডাস্টবিনের কাছে গিয়ে পুপু দেখে, ওরা টলমল করতে করতে গুটি গুটি পায়ে বস্তার বাইরে বেরিয়ে এসে রোদে হাঁটাচলা করছে। ওকে দেখে প্রচণ্ড বেগে ছোট্ট ছোট্ট লেজ নাড়তে শুরু করে দিল। লেজ নাড়ার চোটে লেজ খুলেই যাবে যেন। গুট গুট করে এসে ওর পায়ের ওপর ওঠার চেষ্টা করতে লাগল। পায়ের ওপর ওদের এইটুকু এইটুকু থাবা খরখর করে লাগছে। নখ বেরোয়নি এখনও। কিন্তু নখের মতো শক্ত কিছু আছে। পুপু পা সরিয়ে নেয়। যদি আঁচড় লেগে যায়। পুপু পকেট থেকে বিস্কুট বের করে ভেঙে ভেঙে ওদের দিল। রান্নাঘরে সুবিধে না করতে পেরে পুপু দাদুভাইয়ের কৌটো থেকে সুজি বিস্কুট এনেছে। দাদুভাইকে গিয়ে বলেছিল, “বিস্কুট নেব।” দাদুভাই জিজ্ঞেস করেনি, কেন। বলেছিল, “নাও।” পুপু বিস্কুট নিয়ে সোজা চলে এসেছে। পাপাইদাদা এখনও আসেনি। পুপু বিস্কুট দিয়ে বলছে, “খা খা।” ওরা খাচ্ছে না। শুঁকছে। এদিক-ওদিক দেখছে। ওর দিকে এগিয়ে আসছে। পুপু বিরক্ত হয়ে বলল, “খা না!” এত্ত বোকা ওরা কিছুতেই খাচ্ছে না। পাপাইদাদাও আসেনি। পুপুর খেয়াল পড়ে, কাল থেকে এগুলোর মা-কে তো দেখা যাচ্ছে না। রাস্তায় যত বাচ্চা কুকুর আছে, সব্বার মা আছে। একটু কাছে গিয়ে দেখো, কোথা থেকে ঘাউ-ঘাউ করে তেড়ে আসবে। কাল বিকেলে কুকুরছানা দেখার উত্তেজনায় সেকথা মনেই ছিল না। মা তো সব্বার থাকে। ওর আছে, পাপাইদাদার আছে। এমনকী, আম্মা তো বাবার মা। বাবারও মা আছে। বাড়ির পাঁচিলের ওপর ন্যাকাবেড়াল, তারও তো মা আছে। পুপুর মা-ই পুপুকে একবার দেখিয়েছিল, কালচে বেড়ালটা ন্যাকাবেড়ালের মা।
মা না থাকলে এই কুকুরবাচ্চাগুলোকে খাওয়াবে কে? ভাবতে গিয়ে পুপুর মনখারাপ করতে লাগল। পাপাইদাদা না আসে না আসুক, ও বাড়ির দিকে হাঁটা দিল। ওকে মা-র কাছে যেতে হবে। ও মা! বাচ্চাগুলোও দেখো কেমন গুটগুট করে ওর পেছন পেছন চলে আসছে! এই যাহ্। যাহ্। বাড়ি চলে আসবি না কি? নোংরা কুকুর নিয়ে বাড়ি ঢুকলে আর দেখতে হবে না! মা-বাবা-বিনিপিসি, সব ছুটে আসবে। যা যা, হেট হেট করে তাড়িয়ে ছাড়বে। কিন্তু ওদের তো কেউ নেই! ওদের কে খাওয়াবে? পুপু বাড়ির দিকে ছুটতে থাকে। পেছনে দেখে ওরাও ছুটে ছুটে ওকে ধরার চেষ্টা করছে।
বাড়ি ঢুকতে সামনে বাবা। সাইকেল নিয়ে বসে আছে। ওকে দেখেই হাত বাড়িয়ে দেয়, কী রে কোথায় গেছিলি। পুপু জানে বাবার হাতে কালি লেগে আছে, বাবা ওই কালি পুপুকে লাগিয়ে মজা করতে চায়। অন্য সময় হলে এটাই পুপুর ফেভারিট খেলা। এখন কিচ্ছু ভালো লাগছে না। মা কোথায়, মা? খুঁজে খুঁজে মা-কে খাবার ঘরে টেবিলে জলখাবার নিয়ে বসে থাকতে দেখে। পুপু সোজা গিয়ে মা-র কোলে মুখ গুঁজে দেয়।
মা পুপুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, কী হল রে পাগলা?
পুপু কোলের মধ্যে মাথা গুঁজে দু-দিকে ঘাড় নাড়ে।
মা বেশ খানিক সাধ্যসাধনা করে। তারপর রাস্তার কুকুর শুনে ভুরু কুঁচকায়। “দুনিয়ার জার্ম যে গায়ে! তার ওপর ওর মা জানলে ঘ্যাঁক করে কামড়ে দেবে।”
পুপু বলে, “ওর মা নেই তো।”
মা বলে, “তোকে বলেছে!”
পুপু অবাক হয়, মা কুকুর ঘেঁটেছে বলে ওকে বকে না। বিনিপিসিকে বলে, ওকে জামাকাপড় ছাড়িয়ে হাত পা ধুইয়ে দিতে। তারপর উঠে গিয়ে বাবার সাথে কী সব কথা বলে। পুপু বিনিপিসির সঙ্গে চলে যায়।
তারপর আর কী! পুপু বেরিয়ে দেখে মা গেটের বাইরে একটা মাটির হাঁড়িতে দুধের মতো কিছু একটা ঢেলে দিচ্ছে। ওরা চুকচুক করে খাচ্ছে। মা বলছে, “উৎপাত বাড়ল কিন্তু। এরপরে ঘরে ঢুকবে, পটি করবে। কামড়েও দিতে পারে।”
বাবা বলছে, “গেটে জাল লাগিয়ে দেব, ঢুকতে পারবে না।”
পুপুকে দেখে বাবা বলে, “তারপর পুপুবয়, এদের নাম কী?”
পুপু খানিকক্ষণ ওদের দেখে। তারপর তিনটের দিকে আঙুল দেখিয়ে দেখিয়ে বলে, “চিন্টু, শেরু আর রকি।”
ন্যাকাবেড়াল পাঁচিলের ওপর থেকে দেখে।
ছবি – সুমিত রায়
Leave a Reply